জল খেতে চেয়ে বারবার ইঙ্গিত করছিল সে। জলের দেওয়ার বদলে প্রাক্-প্রাথমিক স্তরের ওই শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে শিক্ষিকারা মারধর করেন বলে অভিযোগ। যদিও শিক্ষিকাদের বক্তব্য, মারধর করা হয়নি। তবে ক্ষতির আশঙ্কায় জলও খেতে দেওয়া হয়নি শিশুটিকে।
জোকার একটি প্রাথমিক স্কুলের এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সেটা দেওয়া হচ্ছে না। স্কুলশিক্ষা দফতরের ধারণা, সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে অভিভাবক-শিক্ষকেরা সচেতন নন বলেই সমস্যা হচ্ছে। তাই ওই পড়ুয়াদের অধিকারের উল্লেখ করে স্কুলে ‘সাইনবোর্ড’ বসানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) উত্তম চট্টোপাধ্যায় জানান, এই ধরনের শিশুদের পরিবারের লোক স্কুলে সর্বক্ষণ তার সঙ্গে থাকতে পারেন। বাড়ি-স্কুল যাতায়াত এবং স্কুলে দেখভালের জন্য সেই সঙ্গীকে বিশেষ ভাতাও দেয় সরকার। শিশুর পরিবার বা স্কুল-কর্তৃপক্ষ, যে-কেউ সঙ্গী নিয়োগ করতে পারেন। এই সুবিধার কথা জানা থাকলে জোকার স্কুলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে কেউ না-কেউ থাকতে পারতেন। তা হলে সমস্যা হত না।
কী কী অধিকার
• স্কুলে স্পেশ্যাল এডুকেটর।
• স্কুলে র্যাম্পের সুবিধা।
• স্কুলে সর্বক্ষণ দেখভাল করার লোক।
• বাড়ি-স্কুল যাতায়াতে সঙ্গীকে সরকারি ভাতা।
* সূত্র: স্কুলশিক্ষা দফতর
আরও কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা জানান স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তার মধ্যে আছে: প্রতিটি স্কুলে র্যাম্পের বন্দোবস্ত করতেই হবে। যাতে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে অসুবিধা না-হয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ করে সরকার। সাধারণ ভাবে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে বসিয়েই পড়ানোর কথা। তবে প্রতিবন্ধী পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি হলে তাদের জন্য স্কুলে বিশেষ শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করার নির্দেশও রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ
অভিভাবকই এগুলো জানেন না। অনেক স্কুলও যে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা অভিভাবকদের ঠিকঠাক জানায় না এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না, স্কুলশিক্ষা দফতরের অনেক কর্তা সেটা মেনে নিচ্ছেন।
শিক্ষাজগতের একাংশের প্রশ্ন, শিক্ষা প্রশাসনের তরফে এত দিন ওই সব সুযোগ-সুবিধার কথা জানানোর ব্যবস্থা হয়েছে কি? স্কুল-কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না, স্কুল পরিদর্শকদের দিয়েই তো সে-দিকে নজর রাখা যায়। সেটুকুর বন্দোবস্ত করা হয়েছে কি?
সরাসরি জবাব দিচ্ছেন না কেউ। তবে বিকাশ ভবনের এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘ভাবতে খারাপ লাগে, প্রতিটি খাতেই টাকা দেয় সরকার। শুধু স্কুলের সদিচ্ছার প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটুকুও দেখা যাচ্ছে না।’’ স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিক্ষার অধিকার আইন (২০০৯) মেনে সব স্কুলেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝোলাতে হয়। কিন্তু অনেক স্কুলই সেই নিয়ম মানে না বলে অভিযোগ। তাই এ বার এই বিধি রূপায়ণে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
‘‘সাইনবোর্ড ঝোলাতেই হবে। স্কুল পরিদর্শকদের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’’ বলেন বিকাশ ভবনের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy