Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ না-থাকলে আমার প্রাণ যেতে পারত: উপাচার্য

পুলিশি ঘেরাটোপে মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পরে বুধবার সকালে অসুস্থ বোধ করছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। তাঁর রক্তচাপ বেশি (১৫০/১০০)। উপাচার্য বললেন, “বুক ধড়ফড় করছে। মাথায় যন্ত্রণা। ডাক্তারেরা ৫-৬ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন।” সেই সঙ্গে কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

পুলিশি ঘেরাটোপে মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পরে বুধবার সকালে অসুস্থ বোধ করছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। তাঁর রক্তচাপ বেশি (১৫০/১০০)। উপাচার্য বললেন, “বুক ধড়ফড় করছে। মাথায় যন্ত্রণা। ডাক্তারেরা ৫-৬ দিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন।” সেই সঙ্গে কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিলেন তিনি।

মঙ্গলবার এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা ছিল?

উপাচার্য: কয়েকটি বিষয় ছিল। তবে প্রাধান্য পায় এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিষয়টি। ইতিমধ্যে যা নিয়ে তদন্ত করছে আইসিসি (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি)। বৈঠকে ছাত্রদের দাবি নিয়ে কথা হয়। এই নিয়ে আইনজ্ঞদের সঙ্গে যে-কথা হয়েছে, তা কাউন্সিল সদস্যদের অবহিত করি। প্রত্যেকে মতামত দেন। ঠিক হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে আচরণবিধি তৈরির জন্য শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হবে।

কিন্তু আইসিসি-র তদন্ত কমিটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে তো পড়ুয়াদের অভিযোগ রয়েছে? তাঁরা পৃথক তদন্তের দাবিও তুলেছেন?

উপাচার্য: প্রথমত, আইসিসি যখন তদন্ত করছে, তখন তা নিয়ে অন্য কোনও কমিটি তদন্ত করতে পারে না। সেটা গ্রাহ্যও হয় না। দ্বিতীয়ত, এই ধরনের তদন্ত কমিটি গড়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের যে-নির্দেশিকা আছে, তার ভিত্তিতেই আইসিসি-র তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তাদের সরিয়ে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। তবে আইসিসি-র রিপোর্ট না-মানলে (৯০ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা) নিয়ম মেনে ফের তদন্তের আবেদন করা যেতেই পারে।

আইসিসি-র তদন্ত কমিটিতে রাজ্যের এক মন্ত্রীর মেয়েকে রাখা হয়েছে কোন যুক্তিতে?

উপাচার্য: ওই কমিটিতে উপাচার্য কয়েক জনকে মনোনীত করতে পারেন। সেইমতো তিন-চার জনকে মনোনীত করেছি। তাঁদের এক জন ওই মন্ত্রীর মেয়ে। তিনি ভাল গবেষক।

গণ্ডগোল শুরু হল কী ভাবে?

উপাচার্য: বিকেল (মঙ্গলবার) সাড়ে ৫টা নাগাদ ইসি-র বৈঠক শেষে গৃহীত সিদ্ধান্ত ছাত্রদের জানানো হয়। তাদের সঙ্গে আলোচনাও হয়। কিন্তু ওরা কিছুই শুনতে চায়নি। উল্টে একরোখা মনোভাব দেখিয়ে শিক্ষকদের ঘেরাও করে আটকে রাখে। তার পরে যত সময় এগিয়েছে, বাইরের অনেক ছেলেমেয়েও তাতে যোগ দেয়। ওদের আমরা কেউ চিনি না। ওরাই পরিচয়পত্র দেখে কয়েক জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেন। ক্রমেই ওদের সুর চড়তে থাকে। আমাদের উদ্দেশে গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া হয়। কয়েক জন শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে সাড়ে ৮টা নাগাদ পুলিশ ডাকি। পুলিশকে বলি, আমরা বন্দি হয়ে আছি। উদ্ধার করুন। পুলিশ আসে ১০টা নাগাদ। তাদের আসার আগে ছাত্রেরা আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। ভয়ে আমার ও রেজিস্ট্রারের ঘরে সকলে আশ্রয় নেন।

কী ভাবে মুক্তি পেলেন?

উপাচার্য: মনে হয় রাত ২টো হবে। সাদা পোশাকের পুলিশ আমাকে কর্ডন করে বার করে আনে। সাদা পোশাকে র্যাফ, কম্যান্ডোও ছিল। আমাকে বেরোতে দেখে উন্মত্তের মতো ছুটে আসে ওরা (ছাত্রেরা)। আমার সামনে দু’জন পুলিশকে লাঠিপেটা করে, ঘুষি মারে। আমার জামায় টান পড়ে। চিৎকার করে আমাকে বলে, ‘চামড়া গুটিয়ে নেব’। পিছনে তাকিয়ে দেখি, এক দল অরবিন্দ ভবনের আলো ভাঙছে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম, এরা প্রাণে মেরে ফেলবে না তো! এই অবস্থায় গেটের বাইরে গিয়ে ফোন করে জানতে পারি, অন্য শিক্ষকেরাও পুলিশের সাহায্যে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। কেউ কেউ পালিয়ে বাইরে চলে আসেন।

পুলিশের পায়ে কি চটি ছিল?

উপাচার্য: আমি খেয়াল করিনি। তবে হতে পারে।

আগের উপাচার্যের আমলে শিক্ষকদের টানা ৫২ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হলেও তিনি পুলিশ ডাকেননি। অনেকে বলছেন, এ বার পুলিশ ডাকার ঘটনাটা নজিরবিহীন। আপনি এত কম সময়ের মধ্যেই পুলিশ ডাকলেন কেন?

উপাচার্য: ঘেরাও করার অধিকার কারও নেই। আমরা শিক্ষক, পুলিশ বা দুর্বৃত্ত নই। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাঁচার জন্য পুলিশের সাহায্য চাইতেই পারি। অন্যেরা কেন চাননি, জানি না।

পুলিশের সঙ্গে শাসক দলের লোকেরাও ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়েদের মারধর করার ভিডিও দেখা যাচ্ছে। পুলিশের কাছে ওঁরা শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছেন। আপনি কী বলবেন?

উপাচার্য: আমাদের কয়েক জন শিক্ষকও ভিডিও তুলেছেন। কারা মারছে, তাতে সে-সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমি অরবিন্দ ভবনের বারান্দায় ছিলাম। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে বা মারতে দেখিনি। ওরা সরিয়ে দিচ্ছিল। মারছিল না তো! ওই পরিস্থিতিতে ওরা (পুলিশ) কী করবে? পুজো? মেয়েরা যে-অভিযোগ করছে, তা আমি দেখিনি। বরং ওরা যে মহিলা পুলিশের জামা ধরে টানছে, তা নিজের চোখে দেখেছি। আর যাঁদের বাইরের লোক বলা হচ্ছে, তাঁরা সাদা পোশাকের কম্যান্ডো। আমি পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ। এক বার ভাবুন, পুলিশ না-থাকলে আমার প্রাণ যেতে পারত। ঘেরাওকারীদের মধ্যে তো মদ্যপ, গুন্ডাও ছিল।

মঙ্গলবার রাতের ঘটনাকে কবি শঙ্খ ঘোষ ন্যক্কারজনক বলেছেন। আপনার কী মত?

উপাচার্য: আমিও ন্যক্কারজনক ঘটনা বলছি। যে-ভাবে বাইরের কিছু লোক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়েছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই। এর পিছনে কোনও শিক্ষকেরও উস্কানি থাকতে পারে। এরা রাজ্যের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।

বিভিন্ন মহল থেকে আপনার পদত্যাগের দাবি উঠেছে?

উপাচার্য: প্রশ্নই ওঠে না। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। আরও লড়ব। বেসু-তে থাককালীন (২০০৪-’০৮) ছাত্র-বিক্ষোভ সামলাতে আমি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলাম। এ-সব ক্ষেত্রে কী ভাবে ছাত্রদের লেলিয়ে দেওয়া হয়, একটা চক্রান্ত হয় তা আমার জানা।

অভিযোগ, আপনি তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। কী বলবেন?

উপাচার্য: এটা মানি না। এটা যারা বলছে, তারাই কালকের ঘটনার মূল চক্রী। তারাই এই ঘটনাটাকে একটা রাজনৈতিক রং দিতে চাইছে।

পুলিশ তো কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে?

উপাচার্য: আমি ছাত্রদের দোষ দিই না। ওদের যারা তাতিয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা উচিত। এটা একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।

কারা ছাত্রদের তাতিয়েছিল, তা কি আপনি জানেন?

উপাচার্য: সে আমি কী করে বলব? পুলিশ তাদের খুঁজে বার করুক।

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে?

উপাচার্য: মঙ্গলবার রাতে এক বার কথা হয়েছে। আজ (বুধবার) সকালেও তাঁকে সব জানিয়েছি। পুলিশকে লিখিত ভাবে নিরাপত্তাহীনতা ও জীবন বিপন্নতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছি।

পুলিশকে কী লিখলেন?

উপাচার্য: লিখলাম, শুধু ছাত্র নয়, ওদের সঙ্গে বাইরের লোকও ছিল।

বাইরের লোক বুঝলেন কী করে?

উপাচার্য: শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় আমার সন্দেহ হয়। ছাত্র হলে তারা পরিচয়পত্র দেখতে চাইত না। কারণ, তারা তো শিক্ষক-কর্মীদের চেনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE