তাণ্ডব: তখনও উত্তপ্ত নুঙ্গি স্টেশন চত্বর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের প্রতিবাদে স্টেশনে ভাঙচুর ও পুলিশের উপরে হামলার ঘটনা ঘটল শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার নুঙ্গি স্টেশনে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় নিত্যযাত্রী ও পুলিশের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ওই স্টেশন চত্বর।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, প্রায় রোজই সকাল ৮টার বজবজ-শিয়ালদহ লোকাল আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে চলছে। একাধিক বার রেল কর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার হয়নি। এ দিনের ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ট্রেন দেরিতে আসা নিয়ে টিকিট কাউন্টারের কয়েক জন রেলকর্মীর সঙ্গে কিছু মহিলা যাত্রীর বচসা বাধে। ওই মহিলাদের অভিযোগ, রেলকর্মীরা গালিগালাজ করেন তাঁদের। তার প্রতিবাদে টিকিট কাউন্টার ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন মহিলা যাত্রীরা। তার পরেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় বজবজ, মহেশতলা ও রবীন্দ্রনগর থানার মিলিত বাহিনী। অভিযোগ, কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার মহিলাদের উপরে লাঠিচার্জ করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে লাইনে বসে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। সাড়ে আটটা নাগাদ বজবজ লোকাল আসতেই চালক ও গার্ডকে টেনে নামিয়ে মারধর করা হয় বলেও নিত্যযাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। চালক ও গার্ডকে উদ্ধার করে পুলিশবাহিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই অবরোধকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। আরপিএফ ও জেলা পুলিশের বাহিনী অবরোধকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরও ছোড়া হয়। পাথর বৃষ্টি শুরু হলে পিছু হটতে থাকে পুলিশ। এর পরেই স্টেশন মাস্টারের ঘরে শুরু হয় ভাঙচুর। টিকিট কাউন্টারের ভিতরে গিয়ে রেলকর্মীদের মারধর করার পাশাপাশি সমস্ত আসবাবপত্রও ভেঙে তছনছ করা হয়। স্টেশনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বাইরের রাস্তাতেও। রেললাইনের পাশাপাশি নুঙ্গি স্টেশন রোড অবরোধ করেন নিত্যযাত্রীরা। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে উল্টে ফেলে দেওয়া হয়। পাথরের আঘাতে তিন জন পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশকর্তারা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলকর্তারা। অবরোধকারীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন রেলকর্তারা। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন পুলিশকর্তারাও।
এক রেলকর্তার কথায়, সকালে ওই ট্রেনটি নৈহাটি থেকে বজবজ আসার পরে ফের শিয়ালদহ যায়। সময়গত কিছু জটিলতার কারণেই ওই ট্রেনটি অনিয়মিত চলাচল করছে। বৈঠকে অবরোধকারীদের ওই ট্রেনটি নিয়মিত চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন রেলকর্তারা। তার পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে মহিলা যাত্রীদের উপরে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের লাঠিচার্জের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, ক্ষিপ্ত যাত্রীরা স্টেশন মাস্টারকে মারধরের চেষ্টা করছিলেন। ওই সময়ে লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা হয়।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে। ওই শাখায় চারটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলকর্তারা। রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নুঙ্গির বিক্ষোভ ছড়িয়ে গিয়েছিল পরের আক্রা স্টেশনেও। ট্রেন অনিয়মিত চলাচলের প্রতিবাদে ওই স্টেশনের নিত্যযাত্রীরাও বিক্ষোভ শুরু করেন। স্টেশনের মাইক খুলে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রেলের তরফে ওই ঘটনায় বালিগঞ্জ জিআরপি-তে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy