কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় রিষড়ার কলেজছাত্রীকে মারধর, শ্লীলতাহানি এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজেরই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার বিরুদ্ধে। এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আমরি হাসপাতালের দিকে আঙুল উঠেছে। দু’টি ঘটনাতেই ভুক্তভোগীরা দ্বারস্থ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আমরিতে মৃত শিশুর মা, বাবা বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাছে সুবিচার চান। তাঁরই পরামর্শে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানান তাঁরা। আর শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি যান নির্যাতিতা কলেজছাত্রী স্বয়ং। তাঁদের দু’জনেরই ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছলে নিশ্চয়ই সমস্যার সুরাহা হবে।
এগুলো অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতি দিনই সকাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বিভিন্ন অভিযোগ, অনুযোগ, দাবিদাওয়া নিয়ে জড়ো হন বহু মানুষ। কিছু ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরিই বক্তব্য জানান তাঁরা। আবার কিছু ক্ষেত্রে তাঁর কার্যালয়ে জমা নেওয়া হয় আবেদনপত্র। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থাও করা হয়। সরাসরি জনসংযোগের মাধ্যমে মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার এই ব্যবস্থা মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই চালু করেছিলেন। ফলে তার সুযোগ নিতে প্রতি দিনই তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমে। আবার রিষড়া বা আমরি-কাণ্ডের মতো মতো বড় কোনও ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পরিবারের লোকজনও চেষ্টা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে।
কোনও সমস্যার সুরাহা চাইতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যাওয়ার এই সুযোগ উদ্যোগ হিসাবে খারাপ নয়। এতে বরং, মুখ্যমন্ত্রীরও ‘ভাবমূর্তি’ বাড়ে। তবে পাশাপাশি, একটা প্রশ্নও থাকে। তা হল, সব ব্যাপারে সুরাহা চাইতে মুখ্যমন্ত্রীর দরজায় যেতে হবে কেন? যেখানে প্রশাসনিক কাঠামো, পুলিশি ব্যবস্থা আছে, জনপ্রতিনিধিরা আছেন, সেখানে কেন সাধারণ মানুষের মনে এই ধারণা তৈরি হবে যে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে না গেলে সুরাহা পাওযা যাবে না? এতে কি সমগ্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের ‘আস্থার অভাব’ই প্রকট হয় না?
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তবে স্বাস্থ্য কমিশন নড়বে। না হলে নড়বে না। সব কমিশনকে তিনি অথর্ব করে রেখেছেন। এ সব স্বৈরাচারের ইঙ্গিত। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা হলে সব হবে। যারা এ সব করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই করছেন।’’ আর বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে অতি সামান্য বিষয়েও মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। কারণ, তিনিই সব। প্রশাসনের অন্যান্য স্তরে আর কারও কাজ করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নেই। কারও সিদ্ধান্ত ওঁর পছন্দ না হলে তাঁর গর্দান যাবে। ফলে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। ফল ভুগতে হয় মানুষকে।’’ তৃণমূল অবশ্য মনে করে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘মানবিক মুখ’ মানুষের চেনা। তাই সেই টানে তাঁর দরজায় ভিড় জমে। অতীতে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই এমন ভূমিকায় দেখা যায়নি। সেটাই বিরোধীদের ‘গাত্রদাহের’ কারণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy