Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
চর্চা শুরু রাজনীতিতে

তৃণমূলের সঙ্গে কি এ বার জোট বাম-কংগ্রেসের

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কংগ্রেস এবং সিপিএম যে হেতু জাতীয় দল, তাই রাজ্যওয়াড়ি তাদের আলাদা নীতি হবে কেন? তাঁদের মতে, বিজেপি-কে ঠেকাতে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএমের একজোট হওয়াই তো এখন সময়ের চাহিদা!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৯
Share: Save:

ডাক দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অমর্ত্য সেনের মত, ‘‘হিন্দুত্বের বিভেদ সৃষ্টিকে রাজনীতিতে প্রতিরোধ করার জন্য রাজনীতির বিভিন্ন মহলের কর্মীদের পরস্পর হাত মেলানো দরকার। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন শরিকের মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু লক্ষ্যটার কথা মাথায় রেখে নানা মতভেদকে মানিয়ে চলতে হবে।’’ বিশিষ্ট জনের জায়গা থেকে অমর্ত্যবাবু যে আহ্বান জানিয়েছেন, রাজনীতির ময়দানে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখনকার উপলব্ধি একই। বিরোধী কংগ্রেস ও বামেদের ডেকে তিনি আবেদন করেছেন, বিজেপি-র বিপদ রুখতে তারাও যেন শক্ত হয়ে লড়াই করে।

এই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা শুরু হয়েছে, বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএম কি এক জায়গায় আসতে পারে না? নরেন্দ্র মোদী সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজনীতিতে এখন বারেবারেই এক বিন্দুতে আসছে ওই তিন দল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৭ এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১৮টি বিরোধী দল সহমত হয়ে এনডিএ-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কংগ্রেস এবং সিপিএম যে হেতু জাতীয় দল, তাই রাজ্যওয়াড়ি তাদের আলাদা নীতি হবে কেন? তাঁদের মতে, বিজেপি-কে ঠেকাতে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএমের একজোট হওয়াই তো এখন সময়ের চাহিদা!

অমর্ত্যবাবুরা যেমন ভাবছেন, সেই পথে গিয়ে তা হলে কি অদূর ভবিষ্যতে শহিদ মিনার বা ব্রিগেডের ময়দানে হাতে হাত ধরে দাঁড়াতে দেখা যাবে মমতা, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং অধীর চৌধুরীদের? রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা অবশ্য এখনই এত দূর ভাবতে নারাজ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা সব দলই নিজেদের মতো করছে। জাতীয় স্তরে যেখানে যেখানে সম্ভব, অভিন্ন অবস্থান নিয়ে লড়াই করা হচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি আলাদা, তাই কৌশলও আলাদা। ইয়েচুরির বক্তব্য, কেরলে সিপিএম কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী। আবার বাংলায় সিপিএম লড়ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এর মানে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হাল্কা করে দেওয়া নয়।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সাফ কথা, ‘‘এ রাজ্যে তৃণমূলকে অপসারণ না করতে পারলে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঠিকমতো লড়াই সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান— বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। তৃণমূল হঠাও, বাংলা বাঁচাও।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, মেরুকরণের রাজনীতিতে বিজেপি-র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মদত দিয়েছেন মমতাও। তিনি চেয়েছেন লড়াই হোক তৃণমূল আর বিজেপি-র মধ্যে। বাকিরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাক। তৃণমূল মদত না দিলে বাংলায় ‘বিজেপি-আতঙ্কে’র কোনও কারণ নেই বলেই অধীরবাবু মনে করেন। প্রদেশ সভাপতির মন্তব্য, ‘‘উনি আমাদের বলছেন, ঘর সামলান। আমরাও বলছি, আপনি ঘর সামলান! ইতিহাসের তো পুনরাবৃত্তি হয়। যে ভাবে উনি বিরোধীদের ঘর ভাঙছেন, এখন পাহাড়ে তো সেই পথেই তৃণমূলের দল ভাঙাচ্ছে অন্য কেউ।’’

বিধানসভায় মঙ্গলবারই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বাম পরিষদীয় মন্ত্রী সুজন চক্রবর্তী কোচবিহারে দু’টি বাম সংগঠনের কার্যালয় তৃণমূলের দখল করে রাখার প্রসঙ্গ তুলেছেন। সুজনবাবুর প্রশ্ন, এই রকম দখলদারির মনোভাব নিয়ে তৃণমূল কী ভাবে একজোট হয়ে লড়াইয়ের কথা বলে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE