Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জোড়াফুল কি ঘাঁটাচ্ছে না পদ্মকে, প্রশ্ন হাত-হাতুড়ির

রাজ্য জুড়ে সব বিরোধী জমিতে জোড়াফুল ফোটানোর পালা চলছে। তবু তার মধ্যেই কোথাও কোথাও প্রাসঙ্গিক হয়ে থেকে যাচ্ছে পদ্ম।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে সব বিরোধী জমিতে জোড়াফুল ফোটানোর পালা চলছে। তবু তার মধ্যেই কোথাও কোথাও প্রাসঙ্গিক হয়ে থেকে যাচ্ছে পদ্ম।

জেলায় জেলায় বাম এবং কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ, পুরসভার কাউন্সিলর, এমনকী বিধায়কদেরও ভাঙিয়ে আনছে শাসক তৃণমূল। কিন্তু বিজেপির কোনও বড় নেতা বা নেত্রীকে তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি-র যাঁরা দলবদল করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই নিচুতলার কর্মী। বিষয়টিকে যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখছে হাত এবং হাতুড়ি শিবির। তাদের বক্তব্য, জোড়া ফুল বেছে বেছে তাদের ঘরই ভাঙছে। কিন্তু পদ্মকে মোটেই নিশানা করছে না। কারণ, দুই ফুলের মধ্যে গোপন আঁতাঁত রয়েছে! পদ্মফুল অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই ওই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করছে, মতাদর্শের জোর তাদের এতই যে, উপড়ে ফেলা যাচ্ছে না!

দ্বিতীয় দফায় সরকারে আসার পরে রাজ্যকে বাম এবং কংগ্রেস শূন্য করার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড় মুর্শিদাবাদে জেলা পরিষদ এবং বহরমপুর পুরসভা তৃণমূল হস্তগত করেছে দল ভাঙিয়ে। এ বার বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ২১১টি আসন জিতলেও মালদহে তাদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। সেই কারণে এ বার ওই জেলা থেকে বিরোধী বিধায়কদের ভাঙানোর চে ষ্টা চলছে জোরদার। কিন্তু মালদহের বৈষ্ণবনগরের বিজেপি-র বিধায়ক স্বাধীন সরকারকে মোটেই ঘাঁটাচ্ছে না তৃণমূল। কংগ্রেসের তিন বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, রবিউল আলম চৌধুরী এবং তুষার ভট্টাচার্য-সহ প্রথম সারির কয়েক জন নেতা তৃণমূলে গিয়েছেন। কংগ্রেসের আরও অনেকে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের খবর। কিন্তু বিজেপি-র কোনও রাঘব বোয়ালকে তৃণমূল ছিপে গাঁথেনি!

শাসক দলের এই সর্বগ্রাসী অভিযান থেকে এখনও আত্মরক্ষা করে রয়েছে বাম-শাসিত শিলিগুড়ি পুরসভা। তবে অচিরেই তারও বিসর্জন ঘটানোর হুমকি দিয়ে রেখেছেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। সেখানকার এক ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলরের তৃণমূলে যোগ এবং বাম বোর্ডের সমর্থক নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষের মৃত্যুর পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে বিজেপির দুই কাউন্সিলরের ভূমিকা। কিন্তু তাঁরা অবস্থান জানাননি। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শিলিগুড়ি পুরসভার পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। এখনও ঠিক করিনি, কী করব।’’ বিধানসভায় বিভিন্ন বিষয়ে ভোটাভুটিতে বিজেপি বিধায়কেরা সচরাচর ভোট দানে বিরত থাকেন।

বাম এবং কংগ্রেস শিবিরের দাবি, লোকসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র গোপন বোঝাপড়া চলছে। মুখে ইদানীং তৃণমূল নেত্রী যতই বিজেপি-বিরোধিতায় সরব হোন, দিল্লিতে মমতার সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিল পাশ করাতে সাহায্য করছেন। আর রাজ্যে তৃণমূল বিজেপি-কে বাদ রেখে অন্য দুই বিরোধী দলকে ভাঙাচ্ছে। মেরুকরণের রাজনীতি করেও বিজেপি-র প্রসারে সাহায্য করছে। বিনিময়ে মোদীর দল ও সরকার তৃণমূলের গলা থেকে নানা কেলেঙ্কারির ফাঁস আলগা করছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন।

বিজেপির প্রতাপবাবুও বলছেন, ‘‘আমাদের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আদর্শের ভিত শক্ত। আর আমরাও তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। তাঁরা দলের কাজের মধ্যে থাকেন। তাই তৃণমূল তাঁদের টলাতে পারছে না।’’ তবে বিরোধী বাম এবং কংগ্রেসের ক্ষয়ে যে তাঁরা উল্লসিত, তা-ও প্রতাপবাবুর কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, ভবিষ্যতে রাজ্যে তৃণমূল আর বিজেপি ছাড়া কিছু থাকবে না। তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হব আমরাই।’’ তাৎপর্যপূর্ণ, বাম এবং কংগ্রেসেরও অভিযোগ, তৃণমূল এবং বিজেপি রাজ্যটাকে শুধু নিজেদের দুই দলের মধ্যে ভাগ করে নিতে চাইছে। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অভাবে বিরক্ত হয়ে বিজেপি ছেড়ে বসে যাচ্ছেন বা দলবদল করছেন জেলায় জেলায় নিচু তলার বেশ কিছু কর্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress CPM TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE