Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিন চালে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাল্টা চাপ, বন্ধ জিটিএ সদর দফতর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিনভর দার্জিলিং চষে ফেলার ফলেই মোর্চার বন্‌ধের মধ্যেও সকাল-সন্ধ্যা ভিড় দেখা গেল ম্যাল চৌরাস্তায়। আর সন্ধ্যা ছ’টার পরে বন্‌ধ উঠে গেলে খুলে গেল বেশ কিছু দোকানপাট।

কিশোর সাহা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

কখনও হেঁটে চলে গেলেন সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পার্টি অফিসের কাছে। কখনও মাইক হাতে অভয় দিলেন পর্যটকদের। কখনও রিচমন্ড হিলে বসেছেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে। তো কখনও আহতদের দেখতে সটান হাজির হাসপাতালে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিনভর দার্জিলিং চষে ফেলার ফলেই মোর্চার বন্‌ধের মধ্যেও সকাল-সন্ধ্যা ভিড় দেখা গেল ম্যাল চৌরাস্তায়। আর সন্ধ্যা ছ’টার পরে বন্‌ধ উঠে গেলে খুলে গেল বেশ কিছু দোকানপাট। কিন্তু এর পরেও প্রশ্ন, বৃহস্পতিবারের আগুন কি পুরোপুরি নিভে গেল? নাকি মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির কারণে সাময়িক ভাবে চাপা পড়ে রইল?

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই এ দিন প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করেন মমতা। এবং তার পর একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা থেকে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রী আপাতত সমঝোতা বা ‘ট্র্যাক টু’ রাজনীতির মেজাজে নেই।

জিটিএ-র হিসাবপত্র বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বৃহস্পতিবারই। ছ’সদস্যের অডিট দল আজ, শনিবারেই সম্ভবত পৌঁছে যাবে দার্জিলিঙে। এর মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জিটিএ-র সচিবকে। তার আগে আরও দু’টি কাজ সেরেছেন মমতা। এক, দার্জিলিং সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তিন আইপিএস-কে নিয়ে এসেছেন পাহাড়ে। সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, জাভেদ শামিম এবং অজয় নন্দা। এর মধ্যে অজয় আবার সন্ত্রাসদমন বাহিনীর প্রধান।

দুই, এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, ভানুভবন বন্ধ করে দেওয়া। এ দিন দার্জিলিঙের জেলাশাসকের তরফে একটি নোটিস ভানুভবনের গায়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই নোটিসের বক্তব্য, এই ভবনের ভিতর থেকেই বৃহস্পতিবার বিমল গুরুঙ্গ এবং মোর্চার অন্য নেতারা জনতাকে খেপিয়েছেন এবং দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছেন। ফলে পুলিশ অফিসারেরা জখম হয়েছেন। বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। তার পরেই বলা হয়েছে, আপাতত দু’মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছে ভানুভবনে ঢোকা। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুমতি ছাড়া কেউ এখানে ঢুকতে পারবেন না।

আরও পড়ুন:জিটিএ নিয়ে ত্রিপক্ষ বৈঠক চায় কেন্দ্র

ভানুভবনেই জিটিএ-র সদর দফতর। বৃহস্পতিবার রাতেই গুরুঙ্গের পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে রাজ্য। এ বার জিটিএ দফতরেও তাঁর ঢোকা বন্ধ হয়ে গেল। উপরন্তু, এই ভবনে বসে জিটিএ-র যাবতীয় কাজকর্মের হিসেব খতিয়ে দেখবে রাজ্যের বিশেষ অডিট দল।

গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ বহু দিনের। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘সরকারি টাকা নয়ছয় হয়েছে, প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবে না। কোনও অফিসার জড়িত থাকলে তাঁকেও ছাড়া হবে না।’’ যদিও মোর্চা নেতা রোশন গিরি বলেন, যত ধরনের অডিট আছে হোক। কোনও অনিয়ম মিলবে না। গুরুঙ্গও একই কথা বোঝাচ্ছেন দলের লোকজনকে।

একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরেও আলাদা ভাবে জোর দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারে মোর্চার আন্দোলন এতটা অশান্ত হয়ে ওঠায় তিনি ক্ষুব্ধ। এর ফলে প্রথমে সরতে হয়েছে জিটিএ সচিবকে। এ বার কোপ পড়ল দার্জিলিঙের পুলিশ সুপারের উপরেও। অমিত জাভালগিকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আসছেন অখিলেশ চতুর্বেদী।

তার আগেই পাহাড়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তিন পুরনো অফিসারকে দার্জিলিঙে আনিয়েছেন মমতা। এঁদের মধ্যে সিদ্ধিনাথ এডি়জি পদমর্যাদার এবং জাভেদ ও অজয় আইজি পদমর্যাদার অফিসার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াঙের পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালাবেন তাঁরা। শুক্রবার বিকেলে ওই তিন অফিসারকে নিয়ে মমতা এক দফা বৈঠকও করেন রিচমন্ড হিলে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তিন জনকে তলব করা হয়েছে। পাহাড়ের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার তদারকি করবেন ওঁরা।’’

এ সবের পরে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ কাটিয়ে সন্ধ্যা ছ’টায় খুলে যায় দার্জিলিঙের দোকানপাট। রাতে সমতলের দিকে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE