ঘনঘোর: আকাশের মুখভার়। কিন্তু মণ্ডপ তৈরি থেমে নেই। মঙ্গলবার বাঁকুড়ায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
আশ্বিনের আকাশ, নাকি ভরা শ্রাবণ!
নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ— শারদীয় আকাশের চেনা ছবি এটাই। কিন্তু কোথায় কী! দু’দিন ধরে কালো শ্রাবণী মেঘে ছেয়ে গিয়েছে আকাশ। আর যখন-তখনই সেই মেঘ ফুঁড়ে নেমে আসছে বৃষ্টি।
সকালটা ভাল হলে সারা দিনটা নাকি ভাল যায়। পুরো শারদোৎসবকে একটা দিন ধরলে মহালয়া তার সকাল। সোমবার রাতে আর মঙ্গল-মহালয়ার দুপুরে বৃষ্টি দেখে পুজোর চার দিনের আবহাওয়া নিয়ে চিন্তিত উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটি থেকে প্রশাসনের কর্তা পর্যন্ত সকলেই জানতে চাইছেন, পুজোয় আবহাওয়ার মতিগতি ঠিক কেমন থাকবে?
বর্ষাশেষে শরতের আগমনি অবশ্য বেশ কিছুটা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল নীল আকাশ আর সাদা মেঘের যুগলবন্দিতে। আশা জেগেছিল, দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ ভাসিয়ে মহাপুজোয় প্রসন্ন হবে প্রকৃতি। পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়েছে সোমবারেই। শনিবারের মধ্যে শহরের অর্ধেক বড় পুজো দর্শনার্থীদের জন্য মণ্ডপ খুলে দেবে। তার মধ্যেই হঠাৎ কালো মেঘের হানাদারি এবং ক্ষণে ক্ষণে বিক্ষিপ্ত বর্ষণ চিন্তা বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: উড়িয়ে দেবো, বিশ্বমঞ্চে কিমকে হুমকি ট্রাম্পের
চিন্তা শুধু মহোৎসবের জন্য নয়। তার আগে কাল, বৃহস্পতিবারেই যে ইডেনে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচ! পরিমণ্ডলে হঠাৎই এক জোড়া ঘূর্ণাবর্তের উদয়ে পুজোর আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই খেলা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। বৃষ্টিতে মঙ্গলবার বাতিল হয়ে গিয়েছে প্র্যাক্টিস। উৎসব মাটি হলে বাঙালির যত কষ্ট হবে, ম্যাচ ভেস্তে গেলে ব্যথা তার থেকে কিছু কম হবে না। খেলার দিন এবং তার পরের কয়েক দিন আবহাওয়া কেমন যাবে, সেটা জোড়া ঘূর্ণাবর্তের গতিপ্রকৃতির উপরে নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
সাধারণ ভাবে বর্ষা-বিদায়ের পরেই আসে শারদোৎসব। কিন্তু পুজো এ বার পড়ে গিয়েছে বর্ষার মধ্যেই। চলতি মরসুমে ঘূর্ণাবর্ত আর নিম্নচাপ যখন-তখন হানা দিয়ে বর্ষণে ইন্ধন জুগিয়েছে। অতিবৃষ্টির জেরে ইতিমধ্যে দফায় দফায় বন্যা হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে। সেই জন্য উৎসবের পটভূমিতে মানুষের আতঙ্কিত প্রশ্ন, বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া এ বারের জোড়া ঘূর্ণাবর্ত কবে রেহাই দেবে দক্ষিণবঙ্গকে?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, আজ, বুধবার থেকেই বৃষ্টির তেজ কমবে। এবং কাল, বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা আছে। তবে পুজোর আবহাওয়া কেমন যাবে, সেই বিষয়ে এখনই নিশ্চিত ভাবে কোনও পূর্বাভাস দিতে রাজি নন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এ বারের দু’টি ঘূর্ণাবর্তের বিদায়ের পরে নতুন কোনও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি না-হলে পুজোয় দুর্যোগের আশঙ্কা নেই। কিন্তু ফের ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে...?
সরাসরি জবাব দিচ্ছে না হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, নির্ঘণ্ট মেনে চললে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষার বিদায় নেওয়ার দিন ৮ অক্টোবর। সেই হিসেবে এ বার পুজো পড়েছে বর্ষার সময়সীমার মধ্যেই। ফলে বৃষ্টির আশঙ্কা ষোলো আনা। বর্ষার শেষ লগ্নে অনেক সময়েই জোরালো নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়় দানা বাঁধে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০১৩ সালে। বিলম্বিত বর্ষার একেবারে শেষে জন্ম নিয়েছিল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘পিলিন’। সেই ঝড় মূলত ওডিশায় আছড়ে পড়লেও ধুয়ে গিয়েছিল মহানগরের পুজো।
এ বার এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও আশঙ্কা না-দেখলেও এক আবহবিদের মন্তব্য, ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার বেশ কয়েকটি লক্ষণ থাকে। সেগুলি দেখে আগাম সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা নেওয়া যায়।
‘‘আগে তো এই জোড়া ঘূর্ণাবর্ত বিদায় নিক। তার পরের কথা পরে ভাবা যাবে,’’ বলছেন ওই আবহবিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy