Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বড়বাজারের গদিতে ছ’শো নোট

এরই মধ্যে কালোর ছোপ দু’হাজারে!

দু’-দশটা নয়। পঞ্চাশ-ষাটটাও নয়। একেবারে ছ’শোটা! আনকোরা দু’হাজারি নোট। নতুন, করকরে। টাঁকশালের গন্ধ এখনও গায়ে লেগে। কলকাতার বড়বাজারে এক ব্যবসায়ীর গদি থেকে ১২ লক্ষ টাকার ওই দু’হাজারি নোটের পাঁজা উদ্ধার করে আয়কর-অফিসারেরা তাজ্জব।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

দু’-দশটা নয়। পঞ্চাশ-ষাটটাও নয়। একেবারে ছ’শোটা! আনকোরা দু’হাজারি নোট। নতুন, করকরে। টাঁকশালের গন্ধ এখনও গায়ে লেগে।

কলকাতার বড়বাজারে এক ব্যবসায়ীর গদি থেকে ১২ লক্ষ টাকার ওই দু’হাজারি নোটের পাঁজা উদ্ধার করে আয়কর-অফিসারেরা তাজ্জব। ওঁদের সন্দেহ, দুধের ব্যবসায়ীটি বিভিন্ন লোক মারফত নিজের জমানো কালো টাকা পাল্টে নতুন নোটগুলো ঘরে তুলেছেন। সেই অর্থে সেগুলোও বিলক্ষণ ‘কালো’।

এবং আত্মপ্রকাশের দশ দিনের মধ্যে দু’হাজারের গায়ে এ হেন কালিমালেপনের আভাস পেয়ে কর্তাদের অনেকে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। ওঁদের অনুমান, এ স্রেফ হিমশৈলের চুড়ো। ‘‘মনে হচ্ছে, এমন অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে কালো টাকা ভাঙিয়ে নতুন নোটের তাড়া সিন্দুকে পুরে ফেলেছেন।’’— মন্তব্য এক আয়কর-আধিকারিকের।

আয়কর-সূত্রে খবর: ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করার পরে ১১ নভেম্বর কলকাতায় নতুন দু’হাজারির আগমন। আধিকারিকদের হিসেবে, বড়বাজারের দুধ-ব্যবসায়ীটি যদি এই ক’দিনে একাধিক বার পুরনো নোট পাল্টে ও নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে থাকেন, তা হলে ওঁর কাছে কুল্লে হাজার পঞ্চাশের বেশি থাকার কথা নয়। নিজের পরিজনদের কাজে লাগালেও (ধরে নেওয়া হচ্ছে, ওঁর পরিবারে পাঁচ জনের অ্যাকাউন্ট আছে, এবং তাঁরা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ সীমা মোতাবেক টাকা তুলেছেন ও বদলেছেন) লাখ আড়াইয়ের বেশি পাবেন না।

তা হলে বারো লক্ষ এল কোত্থেকে? হদিস পেতে গত তিন দিন ধরে ব্যবসায়ীটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আয়কর-সূত্রের দাবি, উনি নিজে যে ব্যাঙ্কে গিয়ে কিছু টাকা তুলেছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে। তবে সে যৎসামান্য টাকা। বরং ওঁর কথাবার্তায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বেশ কিছু শ্রমিককে উনি টাকা তোলার কাজে লাগিয়েছিলেন।

কী রকম? এক আয়কর-কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের সন্দেহ, এক-এক জন লেবারকে উনি পুরনো নোটে আড়াই হাজার টাকা দিতেন। বলতেন নতুন একটা দু’হাজারি নোট এনে দিতে। বাকি পাঁচশো রেখে দিতে।’’

মোটা ‘কমিশনের’ টোপ গিলে অনেক শ্রমিক ওঁর ফাঁদে পা দিয়েছিলেন বলে আয়কর-কর্তাদের অনুমান। তাঁদের ধারণা, ওই শ্রমিকেরা নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুরনো নোটে আড়াই হাজার জমা করেছেন। তার পরে এটিএম বা ব্যাঙ্ক কাউন্টার থেকে দু’হাজারি নোট নিয়েছেন। তা পৌঁছে গিয়েছে ব্যবসায়ীর গদিতে।

তার মানে উনি এ ভাবে গত দশ দিন ধরে গড়ে রোজ ১ লাখ ২০ হাজার জোগাড় করেছেন! সে ক্ষেত্রে তো দৈনিক ৬০ জন ‘এজেন্ট’কে কাজে লাগাতে হবে? আয়করের পর্যবেক্ষণ, কার্যক্ষেত্রে হয়তো অত জনের দরকার পড়েনি। ‘‘হয়তো একই লোক ওঁর হয়ে নানা ব্যাঙ্কে নানা পরিচয়পত্রে টাকা জমা দিয়েছে, নানা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছে। গোড়ায় তো হাতে কালি লাগানোও হয়নি। সেই সুযোগ ওরা নিয়ে থাকতেই পারে।’’— বলছেন এক অফিসার। তাঁদের সন্দেহ, দৈনিক জনা পঁচিশ-তিরিশ লোককে দিয়ে কালো টাকা ভাঙানোর পর্ব চালিয়ে গিয়েছেন বড়বাজারের দুধ-ব্যবসায়ীটি। গত ক’দিনে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ‘ছোট’ অ্যাকাউন্ট যে ভাবে আচমকা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে, তা দেখে আয়কর-কর্তাদের সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু বড়বাজার নয়। মনে হচ্ছে, নানা জায়গায় নানা ব্যক্তি এই পথে হেঁটেছেন।’’ আয়কর-সূত্রের খবর: কয়েকটি ব্যাঙ্কে এমন অনেক গ্রাহকের হদিস মিলেছে, যাঁরা আগে অ্যাকাউন্টে বছরে গ়়ড়ে দশ হাজার টাকা জমা দিতেন। তাঁরাই গত দশ দিনে কয়েক বার কুড়ি-পঁচিশ হাজার করে ঢেলেছেন!

এর নেপথ্যে কালো টাকা সাদা করার তাগিদ আছে কিনা, আয়কর সেটা খতিয়ে দেখতে চায়। রাজ্যের সব ব্যাঙ্কের কাছে ওই সব ছোট অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তারা খোঁজ-খবর নিচ্ছে। এতে বড়বাজারের দুধ-ব্যবসায়ীটির মতো বেশ কিছু কালোবাজারির সন্ধান মিলবে বলে তারা আশাবাদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

demonetisation 2000 notes currency Income tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE