Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পেটে বালিশ বেঁধে ঘুরত, গর্ভপাত ঢাকতেই শিশু চুরি করেছিল চিন্ময়ী

রীতিমতো পরিকল্পনা করেই প্রতিবেশিনির শিশু চুরি করে ছিলেন চিন্ময়ী বেজ। চিন্ময়ী ও তাঁর স্বামী প্রশান্ত বেজকে জেরা করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে শিশু কোলে দেখা গেল সেই মহিলাকে।

সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে শিশু কোলে দেখা গেল সেই মহিলাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

রীতিমতো পরিকল্পনা করেই প্রতিবেশিনির শিশু চুরি করে ছিলেন চিন্ময়ী বেজ। চিন্ময়ী ও তাঁর স্বামী প্রশান্ত বেজকে জেরা করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

পুলিশ সূত্রের খবর, চিন্ময়ীর গত ডিসেম্বরে গর্ভপাত হয়েছিল। কিন্তু সে কথা চিন্ময়ী বাড়িতে জানাননি বলে দাবি। সব ঠিক থাকলে তাঁর এ সময়েই প্রসব হতো এবং এই কয়েক মাস চিন্ময়ী পেটে বালিশ বেঁধে ঘুরতেন বলেও স্বীকার করেছেন বলে খবর।

প্রশ্ন হল, বালিশ বেঁধে পড়শিদের চোখে ধুলো দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বামী-শাশুড়ির কাছে তা গোপন থাকে কী করে? চিন্ময়ী যখন শিশু সমেত হাজির হলেন, তখন বাড়ির কারও প্রশ্ন জাগল না কী করে?

পুলিশ আপাতত জেনেছে, গত কয়েক মাসে চিন্ময়ী একাধিক বার মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আবার আসেন। সেখান থেকে সরস্বতীর শিশুটিকে নিয়ে বেরিয়ে মেট্রোয় পার্ক স্ট্রিট যান। সেখান থেকে গিয়েছিলেন বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। সেখান থেকেই প্রশান্তকে ফোন করে জানান, তিনি সন্তান প্রসব করেছেন। প্রশান্ত শিশু হাসপাতালে গিয়ে চিন্ময়ী ও শিশুকে নিয়ে বাগমারির বাড়িতে ফেরেন। ‘‘শিশুটিকে চুরি করে ঠান্ডা মাথায় পালিয়েছিলেন চিন্ময়ী। পুরো পরিকল্পনা তাঁর মাথায় ছিল,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা। পুলিশেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাগমারির একটি আয়ুর্বেদিক দোকানে যাতায়াতের সূত্রে সরস্বতীর মেডিক্যালে ভর্তির খবর জানতে পেরেছিলেন চিন্ময়ী।

আরও পড়ুন: চার মায়ের গোয়েন্দাগিরিতেই সন্তান ফিরে পেলেন সরস্বতী

কেন শিশু চুরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন ওই মহিলা? প্রতিবেশীদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, মাস কয়েক আগে প্রশান্তের ভাইয়ের ছেলে হওয়ার পর থেকেই নিজের পুত্রসন্তানের জন্য আকাঙ্খা বেড়ে গিয়েছিল চিন্ময়ীর। গর্ভপাতের ঘটনা চেপে যাওয়ার পিছনে পারিবারিক চাপ ছিল কি না, সেটাও জানা দরকার বলে জানাচ্ছেন মনোবিদরা। মনোবিদ দিনাজ জিজিবয়ের মতে, ‘‘চিন্ময়ীর নিশ্চয় মনে হয়েছিল বা তাঁকে মনে করানো হয়েছিল যে, পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে না পারলে মা হিসেবে তিনি অসম্পূর্ণ।’’ মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল লক্ষ করেছেন, ‘‘নিজের ভুল কাজকে ঠিক প্রমাণ করার জন্য আগে থেকে সব পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছিলেন চিন্ময়ী। এই ঘটনাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ডিফেন্স মেকানিজম বলা হয়।’’

চিন্ময়ীর একার বুদ্ধিতেই সব হল? এদিন নবান্নে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘‘কোনও গড়বড় থাকতে পারে। তদন্ত এখন প্রাথমিক পর্যায়ে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এ দিন ওই দম্পতিকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হলে তাঁদের ২৪ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। প্রশান্ত অবশ্য চুরির কথা মানতে চাননি। তাঁর এখনও দাবি, ‘‘ওই বাচ্চা আমাদেরই। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

inborn Trafficking Medical College hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE