Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পার্থের অভিযোগ যাচাইয়ের দাবি জুটার

সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভর্তির সেই সব পরীক্ষায় কতটা স্বচ্ছতা থাকে, কর্তৃপক্ষ সেটা দেখুন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

তিরটা এসেছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিক থেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিক্রিয়াটাও হয়েছে জব্বর। শিক্ষামন্ত্রী যাদবপুরে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অস্বচ্ছতার যে-অভিযোগ তুলেছেন, তা খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি (জুটা)। অভিযোগের সারবত্তা না-মিললে সংবাদমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের বিবৃতিও দাবি করা হয়েছে।

সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভর্তির সেই সব পরীক্ষায় কতটা স্বচ্ছতা থাকে, কর্তৃপক্ষ সেটা দেখুন। অভিভাবকেরা এই নিয়ে বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশঙ্কামুক্ত করলে তিনি (মন্ত্রী) খুশি হবেন।

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর এই ধরনের বিরূপ মন্তব্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওঁর কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে উনি উপাচার্যকে তা জানাতে পারতেন। আর তা যদি না-থাকে, তা হলে কোনও অবস্থাতেই এমন বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়।’’ এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি সুকান্তবাবু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিভিন্ন কলেজে ভর্তি নিয়ে নানা ধরনের ঘটনায় উত্তরোত্তর ক্ষোভ বাড়ছে। শিক্ষামন্ত্রী সেই ক্ষোভ প্রশমন করতে না-পেরেই যাদবপুর নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিতে চাইছেন।

যাদবপুরে স্নাতক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি নেওয়া হয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের পরীক্ষার ভিত্তিতে। বিজ্ঞান বিভাগের কোনও বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পরীক্ষায় বসতে হয় না। ভর্তি হয় নম্বরের ভিত্তিতেই। তবে কলা বিভাগে ইংরেজি, তুলনামূলক সাহিত্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং দর্শনে পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। মন্ত্রী অস্বচ্ছতার যে-অভিযোগ তুলেছেন, ওই সব বিভাগই তার লক্ষ্য বলে শিক্ষা শিবিরের ধারণা।

যাদবপুরের ইংরেজি বিভাগ থেকে ২০১৫ সালে অবসর নিয়েছেন স্বপন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী হয়তো কারও কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। অন্য বিভাগে কী হয়, জানি না। কিন্তু অবসরের আগে পর্যন্ত দেখেছি, ইংরেজিতে ভর্তি-প্রক্রিয়া এমনই ছিল যে, কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে পারত না।’’

জুটা-র পক্ষ থেকে এ দিন উপাচার্যকে জানানো হয়েছে, যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হোক। যদি দেখা যায় শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ সত্যি, তা হলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আর যদি এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা না-থাকে, তা হলে উপাচার্য এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সেটা জানান। জুটা-র সাধারণ সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী যখন এমন কথা বলেছেন, তার নিশ্চয়ই কিছু ভিত্তি রয়েছে। তাই বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখা দরকার।’’ যাদবপুরের অন্য শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র পক্ষে গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘অভিযোগ যখন উঠেছে, তার সত্যতা যাচাই করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বজায় রেখেই সেটা করা দরকার।’’

আর উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, ভর্তি নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তাঁরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE