Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

রণক্ষেত্র জয়গাঁও

সুকনার মতো ভুটান লাগোয়া জয়গাঁতেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় মোর্চা ও পুলিশের। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান মোর্চা সমর্থকেরা। ভাঙচুর করা হয় একাধিক গাড়ি।

গাড়ির চাকা জ্বালিয়ে মোর্চাকর্মীদের মিছিলের প্রতিরোধে স্থানীয় বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

গাড়ির চাকা জ্বালিয়ে মোর্চাকর্মীদের মিছিলের প্রতিরোধে স্থানীয় বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

নারায়ণ দে
জয়গাঁ ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪৭
Share: Save:

শনিবার ছিল সুকনা। রবিবার জয়গাঁ, মালবাজার ও নকশালবাড়ি। তবে ডুয়ার্স আর তরাইয়ে দু’রকম ছবি দেখা গেল এ দিন। জয়গাঁয় যেখানে পুলিশ-মোর্চা খণ্ডযুদ্ধ হল, সেখানে নকশালবাড়িতে সাধারণ মানুষই এগিয়ে এসে বিমল গুরুঙ্গের দলকে আটকে দেয়। মালবাজারেও মোর্চা মিছিলের চেষ্টা করে। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেখানে এগোনো সম্ভব হয়নি।

সুকনার মতো ভুটান লাগোয়া জয়গাঁতেও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় মোর্চা ও পুলিশের। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান মোর্চা সমর্থকেরা। ভাঙচুর করা হয় একাধিক গাড়ি। এ দিন প্রথমে জয়গাঁ শহরের গোপীমোহন মাঠ এলাকায় মোর্চার মিছিল বের করে। পুলিশ ব্যারিকেড করে রাস্তা আটকে দেয়। পুলিশকর্তাদের দাবি, তখন তাদের লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হয়। পাল্টা পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। দুপুর দেড়টা নাগাদ জয়গাঁ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সমানে মোর্চার অনশন মঞ্চ ঘিরে জড়ো হন কয়েশো সমর্থক। সেখানেও তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। মোর্চা সমর্থকেরা বিভিন্ন গলি থেকে গুলতি ছোড়ে। ঘটনার জেরে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মঙ্গলাবাড়ি এলাকায় যাত্রিবাহী একটি গাড়ি রাস্তায় উল্টে তাতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করা হয়। ভুলনটারি থেকে তোর্সা চা বাগান পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এই তাণ্ডবের জন্য পুলিশ মোর্চাকেই দায়ী করেছে। ডিআইজি রাজেশ যাদব জানান, বেশ কয়েক জন পুলিশ আহত হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ জানান, মোর্চা সমর্থকদের ভারত-ভুটান যোগাযোগকারী প্রধান সড়কটি থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। তাঁরা উল্টে পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। বেশ কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ। মোর্চার কালচিনির সভাপতি মহেন্দ্র ছেত্রী জানান, পুলিশ তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর কাঁদানে গ্যাস, জল কামান চালালে সমর্থকরা উত্তেজিত ওঠে। পুলিশের মারে ন’জন ঘায়েল হয়েছে বলেও অভিযোগ।

ডুয়ার্সে এই তাণ্ডবের দিনে তরাইতেও মিছিল করতে গিয়েছিল মোর্চা। কিন্তু নকশালবাড়ি রুখে দাঁড়ানোয় তা হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, স্থানীয়দের সঙ্গে পাহাড় থেকে গাড়ি বোঝাই করে লোক এনেছিল মোর্চা। এ ভাবেই সুকনা, জয়গাঁয় গোলমাল বাঁধানো হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁরা আরও বলেন, কিন্তু নকশালবাড়িতে তা দলমত সকলে মিলে রুখে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে ফের চেষ্টা হলে, একইভাবে প্রতিবাদ করা হবে।

মোর্চার অবশ্য দাবি, তৃণমূল নেতারা সক্রিয় ভাবে লোকজনকে রাস্তায় নামিয়ে শান্তি মিছিল ভেস্তে দিয়েছে। তাঁদের সাহায্য করেছে পুলিশ। কিন্তু সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘খুকুরি নিয়ে গুন্ডামি মানুষ মেনে নেবে না। তাই সাধারণ মানুষ প্রতিরোধে নেমেছে।’’

এ দিন সকাল ১১টায় মহিষহাটিতে শ দু’য়েক মোর্চা কর্মী খুকরি নিয়ে মিছিল শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের আটকায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে পানিঘাটার দিক থেকে কয়েক গাড়ি বোঝাই কর্মী এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। সেই খবর রটে গেলে নকশালবাড়ির বাজার, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। টায়ার জ্বালিয়ে পথ আটকানো হয়। এক মোর্চা নেতার গাড়িও ঘিরে ফেলা হয়। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

(সহ-প্রতিবেদন: কৌশিক চৌধুরী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE