পরিদর্শন: বিদ্যাসাগর কলেজে বহিরাগতদের ধমক দিচ্ছেন জয়া দত্ত (নীল পোশাক)। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
কলেজে ভর্তি নিয়ে টাকার খেলায় অপবাদ বা অভিযোগ সবই তাঁর সংগঠনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমনই যে, নিজের চোখে সব দেখতে কলেজে কলেজে ছুটতে হচ্ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর সভানেত্রী জয়া দত্তকে। মঙ্গলবার বিদ্যাসাগর ও মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখলেন, বহিরাগতদের দাপটে ভর্তি নিয়ে কী কাণ্ডকারখানা চলছে!
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে জয়া প্রথমে যান বিদ্যাসাগর কলেজে। কথা বলেন ছাত্র সংসদের সদস্য এবং কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে। শিক্ষা সূত্রের খবর, কলেজে ঢুকেই বেশ কয়েক জন বহিরাগতকে দেখতে পান জয়া। রেগে গিয়ে তিনি সংসদের সদস্যদের প্রশ্ন করেন, ‘‘এঁরা ভিতরে কেন? এঁরা কি ছাত্র?’’ তার পরেই সরে যায় বেশ কয়েক জন যুবক। জয়া পুরো কলেজ ঘুরে দেখেন। তিনি জানান, টাকার বিনিময়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুপ্রিয় বসাক নামে এলাকারই এক যুবক টাকা আদায় করছে বলে তাঁর কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। ‘‘ওই যুবক কলেজের কেউ নন। টিএমসিপি-র সঙ্গেও তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। হাতেনাতে ধরতেই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু তাঁকে দেখতে পাইনি,’’ বলেন জয়া।
কলেজের বাইরে এসে কয়েক জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন ওই ছাত্রনেত্রী। তনিমা মান্না নামে হাওড়ার দাশনগর থেকে আসা এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু প্রথম তালিকায় নাম ছিল না। তার পরে কলেজে এলে গার্গী নামে এক তরুণী ভর্তি করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। সব শুনে তনিমার ফোন থেকেই গার্গীকে ফোন করেন জয়া। ফোনের ও-পার থেকে গার্গী জানান, সব হয়ে যাবে। তবে তার আগে মরসুম সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কে এই মরসুম, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কয়েক মিনিট পরে ফের ফোন করা হলে গার্গী তখন অবশ্য পুরোটাই অস্বীকার করেন। জয়া বলেন, ‘‘আমি এদের নামে থানায় অভিযোগ করবো।’’
উত্তরা আদক নামে হাওড়ারই অন্য এক ছাত্রী জানান, ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁকে বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কাঁকুড়গাছি, দমদম থেকে আসা অনেক ছাত্রছাত্রী একই কথা জানান। জয়ার দাবি, যাঁরা টাকার বদলে ভর্তির আশ্বাস দিচ্ছেন, তাঁরা কলেজের বর্তমান পড়ুয়া নন। জয়ার পরিদর্শন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু।
বিদ্যাসাগরের পরে জয়া যান মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে। তাঁকে দেখেই তিন মোটরবাইক-আরোহী দ্রুত সরে যান। ভর্তি হতে আসা এক পড়ুয়ার সঙ্গে জয়পুরিয়া কলেজের এক আংশিক সময়ের শিক্ষককে দেখে জয়া জানতে চান, তিনি এখানে কেন? ওই শিক্ষক সদুত্তর দিতে পারেননি। জয়ার কথায় স্পষ্ট, ভর্তিতে টাকার খেলা চলছেই। তবে তাতে জড়িয়ে বহিরাগতেরা।
বিরোধী শিবির এই সাফাই মানতে রাজি নয়। এসএফআইয়ের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক সৌম্যজিৎ রজক তির্যক ভঙ্গিতে বলেন, ‘‘জয়া দত্ত ঠিক কথাই বলেছেন! বহিরাগতেরাই টাকা নিয়ে ভর্তির খেলার আসল চাঁই। খুঁজলে বেরিয়ে পড়বে বহু মন্ত্রী, এমএলএ-র নাম।’’
ভর্তি নিয়ে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে চলেছে চারুচন্দ্র কলেজে। এর আগে কলেজ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টিএমসিপি-র নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংসদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। তার পরে কলেজ-কর্তৃপক্ষ ভর্তি হতে আসা দুই ‘জালিয়াত’ ছাত্রীর বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক বিমলশঙ্কর নন্দ এ দিন বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুসারে আমরা ভর্তি-প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। কিন্তু এর মধ্যেই এই জালিয়াতির সন্ধান পাই । ধরা পড়ে এই দুই পড়ুয়া সদুত্তর দিতে পারেনি। আমরা থানায় সব জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy