প্রথমে শুনতে চাননি বিচারপতি অসীম রায়। তার পরে, বৃহস্পতিবার বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছেড়ে দিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের জামিনের আবেদনের মামলা।
ফলে মদনবাবুর জামিন তো দূরের কথা, তাঁর আর্জির শুনানিই শুরু হল না কলকাতা হাইকোর্টে। এই নিয়ে অন্তত চার বার আটকে গেল ওই মামলা। দু’বার দুই বিচারপতি সরে দাঁড়ানোয় এবং অন্য দু’বার মন্ত্রীর চিকিৎসা-নথি সংক্রান্ত জটে।
কয়েক বারের বাধা কাটিয়ে মদনবাবুর জামিনের আবেদনের মামলাটি বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য ওঠে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে। দু’পক্ষের কৌঁসুলিদের বক্তব্য শুরু হওয়ার আগেই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি মামলাটি শুনতে চান না। মামলাটি তিনি তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ থেকে ছেড়ে দিচ্ছেন। মামলা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিচারপতি রায়ের মতোই ব্যক্তিগত কারণের কথা বলেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তফাত হল, বিচারপতি রায় সেই কারণ ব্যাখ্যা করেননি। বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন ব্যক্তিগত কারণটা কী, তা পরিষ্কার জানিয়ে দেন।
কী সেই ব্যক্তিগত কারণ?
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, মদন মিত্রের পরিবারের একটি অনুষ্ঠানে (মন্ত্রীর ছেলের বিয়ে) তাঁকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। নিমন্ত্রণের চিঠি নিলেও তিনি সেই অনুষ্ঠানে যাননি বলে জানান বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, সেই নিমন্ত্রণের সূত্রেই তিনি মামলাটি তাঁর আদালত থেকে ছেড়ে দিচ্ছেন।
বিচারপতি অসীম রায় এবং বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চে মদনবাবুর জামিনের আবেদনের মামলাটি উঠেছিল মাস দেড়েক আগে। বিচারপতি রায়ও শুনানির আগেই মামলাটি ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত কারণটা ঠিক কী, তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
কখনও চিকিৎসার নথি না-থাকা, কখনও বিচারপতিরা ব্যক্তিগত কারণে মামলা ছেড়ে দেওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে মদনবাবুর জামিনের আবেদনের শুনানি। গত দেড় মাসে এই নিয়ে চতুর্থ বার তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি পিছিয়ে গেল। বিচারপতিদের সরে দাঁড়ানোটা যদি দু’বার মামলা পিছোনোর কারণ হয়, অন্য দু’বার সেটি আটকেছে মন্ত্রীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নথির জটে। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গত ১২ ডিসেম্বর মদনবাবুকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তার পর থেকেই দফায় দফায় তাঁর চিকিৎসা চলছে এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে মদনবাবুর চিকিৎসার নথিপত্র হাতে না-আসায় তাঁর আইনজীবীরাই এক বার কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জামিনের আবেদনের শুনানিতে যোগ দিতে চাননি।
ক্রীড়ামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সিবিআইয়ের তদন্তাধীন। সেই জন্য তাঁর চিকিৎসার কাগজপত্র সংগ্রহ করে জোগান দেওয়ার কথা ওই সংস্থারই। নিয়ম অনুযায়ী তারা সেই নথি ধৃতের কৌঁসুলিদেরও দিতে বাধ্য। কিন্তু ২৪ মার্চ মদনবাবুর কৌঁসুলিরা আদালতে জানান, তাঁদের মক্কেলের চিকিৎসার সব নথি দেয়নি সিবিআই। সেই জন্য তাঁরা শুনানিতে যোগ দিতে পারছেন না। পরে মন্ত্রীর কৌঁসুলিরা নিজেদের উদ্যোগে ওই নথি সংগ্রহ করে আনেন। কিন্তু ৭ এপ্রিল তদন্ত সংস্থার আইনজীবীরা জানান, হাসপাতালের কাগজপত্র তাঁদের হাতে পৌঁছয়নি। সে-দিন এই কারণ দেখিয়েই সওয়াল করতে চাননি সিবিআইয়ের আইনজীবীরা।
শুনানির কথা না-থাকলেও মদনবাবুর আইনজীবী ৯ এপ্রিল বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জানান, তাঁর মক্কেল গুরুতর অসুস্থ। এসএসকেএমে তাঁর চিকিৎসা চলছে। মন্ত্রীর চিকিৎসার সব নথিপত্র তাঁর কাছে আছে। তিনি আদালতে তা পেশ করতে চান। জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রীর জামিনের আবেদন শোনার জন্য বিচারপতিদের কাছে আবেদন জানান তিনি। কিন্তু সিবিআইয়ের প্রবীণ আইনজীবী উপস্থিত না-থাকায় সে-দিনও শুনানি হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ১৬ এপ্রিল মামলার শুনানি হবে।
১০ এপ্রিল বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় কর্নাটক হাইকোর্টে বদলি হযে যান। মামলাটি চলে যায় বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন সেটি না-শোনায় মদনবাবুর জামিনের বিষয়টি আবার অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy