কারণ বদলে গেল ২৪ ঘণ্টা পেরোতেই!
এলাকায় সাতশো ভোটে তিনি পিছিয়ে। তাই সেখানে আইটিআই হবে না— শনিবার কালনার কাঁকুরিয়ায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই এ কথা বলেছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সংবাদমাধ্যমে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রকাশিত হতেই বিতর্ক দানা বাঁধে নানা মহলে। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, উন্নয়ন পেতে গেলে কোনও নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে, এ কথা ব্ল্যাকমেলের সামিল। বিতর্কের মুখে পড়ে রবিবার ক্ষুদ্র, কুটির ও ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আসলে জমি পেতে সমস্যা হচ্ছিল কাঁকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। তাই আইটিআই সরিয়ে পাশের পঞ্চায়েত বেগপুরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, কাঁকুরিয়ায় উন্নয়ন থমকে থাকবে না।’’
পূর্বস্থলীর এই অঞ্চলে ২০০৬ সাল থেকে বিধানসভা ভোটে জিতছেন স্বপনবাবু। এ বারেও পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতেই ‘লিড’পেয়েছেন। ৩৬ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন। একমাত্র ৭০০ ভোটে হেরেছেন কাঁকুরিয়ায়। গোসা কি সে কারণেই? বিতর্কে না ঢুকে মন্ত্রীর দাবি, অনেক উন্নয়ন করা সত্ত্বেও কাঁকুরিয়ার মানুষ তার মূল্যায়ন না করায় তাঁদের প্রতি অভিমান তৈরি হয়েছিল। তা থেকেই কিছু কথা বেরিয়ে এসেছে।
ঠিক কী বলেছিলেন স্বপনবাবু?
বেগপুর কৃষি উন্নয়ন সমিতির ব্যাঙ্কের শাখার উদ্বোধনে গিয়ে শনিবার মন্ত্রী বলেন, ‘‘কাঁকুরিয়ার কোনও নেতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবেন না? এটা হয়! কার সঙ্গে কী আছে, সেটা বড় কথা নয়। মমতাদি তো কোনও ক্ষতি করেননি। এই পঞ্চায়েতের উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি টাকা দিয়েছেন। রাস্তা করে, সেতু করে, কলেজ করে, জলপ্রকল্প করে কি কোনও অন্যায় করেছি? এই ক্ষোভে, দুঃখে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আইটিআই কলেজ কাঁকুরিয়ায় হবে না। হবে বেগপুর পঞ্চায়েতে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘১৭ কোটি খরচ করেও ৭০০ ভোটে হারলাম। আমার মনে হয়, কাঁকুরিয়ায় কাজ না করলেই বেশি সমর্থন পাওয়া যায়। অতএব এখানেই স্টপ!’’
মন্ত্রীর এই মন্তব্য ভাল চোখে দেখেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। কাঁকুরিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আয়ুব নবি শেখ বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে মন্ত্রী এ রকম কথা না বললেই পারতেন। এখানে পরাজয়ের কারণ উনি জানেন।’’ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি চঞ্চল সিংহরায়ের কথায়, ‘‘হয়তো অভিমানেই বলেছেন। কিন্তু উনি শুধু মন্ত্রীই নন, দলের জেলা সভাপতিও। দলের ভালর জন্য এলাকায় নেতৃত্ব বদল করলেও আমরা মেনে নেব। তবে আমরা চাই ওঁর হাত ধরেই এলাকার উন্নয়ন হোক।’’ তৃণমূলের বর্ধমানের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের মন্তব্য, ‘‘আমি স্বপন দেবনাথকে অনেক দিন ধরে চিনি। উনি এ ভাবে এ রকম কথা বলতে পারেন না।’’
তবে আইটিআই যে সরে বেগপুরে হচ্ছে, তা জানিয়েছেন বেগপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শিউলি মল্লিক। তিনি জানান, প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ বিঘা জমি দরকার। পশ্চিম সাহাপুর মৌজায় জমি মিলেছে। কাঁকুরিয়ার উপপ্রধান কিন্তু বলছেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায় জমির অভাব নেই। এখানে আইটিআই গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি, তাই হয়নি।’’ চাপে পড়ে স্বপনবাবু জানিয়েছেন, উন্নয়ন বন্ধ হবে না।
পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কাঁকুরিয়ায় তৃণমূলের অজস্র দুর্নীতি ছিল। মানুষ ভোট বাক্সে তার জবাব দিয়েছেন। কাঁকুরিয়া থেকে আইটিআই সরানোর সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেন, ‘‘তৃণমূল সব কিছু দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক দিয়েই ভাবে। তবে এক জন মন্ত্রীর এ রকম বলা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy