Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খুনটা হোক সামনেই, ‘প্ল্যান’ ছিল মনুয়ার

খুন করবে প্রেমিক, আড়ালে থেকে নিজের চোখে স্বামীর খুন দেখতে চেয়েছিল মনুয়া। বাধ সেধেছিল একটি ফোন।

মনুয়া মজুমদার

মনুয়া মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

খুন করবে প্রেমিক, আড়ালে থেকে নিজের চোখে স্বামীর খুন দেখতে চেয়েছিল মনুয়া। বাধ সেধেছিল একটি ফোন।

বারাসতের অনুপম সিংহ খুনের তদন্তে পুলিশি জেরায় বুধবার এমনই জানিয়েছে মনুয়া মজুমদার। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের দিন, ৩ মে স্বামী অফিস থেকে ফেরার অপেক্ষায় প্রেমিক অজিতকে নিয়ে অনুপমের বাড়িতেই বসেছিল মনুয়া। অজিতের খিদে পাওয়ায় তাকে ডিমের পোচ করেও খাওয়ায় সে। বারবার অনুপমকে ফোন করতে থাকে। বলে, ‘আজ অফিস থেকে ফিরে আমাদের বাড়ি (মনুয়ার বাপের বাড়ি) যেতে হবে না। বাড়ি ফিরে রেস্ট নিও।’

পুলিশের দাবি, জেরায় অজিত জানিয়েছে, তখনও পর্যন্ত ঠিক ছিল, খুনের পরে সে ও মনুয়া একসঙ্গেই ফিরবে। কিন্তু এর পরেই মনুয়ার মোবাইলে আসতে থাকে তার বাবার ফোন। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা মনুয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, স্বামীকে খুনের ‘লাইভ কমেন্ট্রি’ কেন শুনতে চেয়েছিলেন আপনি?’’ উত্তরে মনুয়া স্বীকার করেছে, অনুপম খুনের সময়ে অজিতের সঙ্গে সেও থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনই মনুয়ার বাবা নির্মল মজুমদার পরের পর ফোন করতে থাকেন তাকে।

পুলিশের দাবি, মনুয়া জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পরে খুনের দিনই প্রথম বারাসত পুরসভায় কাজে গিয়েছিল সে। তার পরে অনুপমকে খুনের উদ্দ্যেশেই অজিতকে নিয়ে পুরসভা থেকে চলে যায় অনুপমের বাড়িতে। সেখানে কিছুক্ষণ কাটায় তারা। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সেই সময়েই মনুয়াকে বারবার ফোন করতে থাকেন তার বাবা।’’

মনুয়া জানিয়েছে, বাবা ফোন করে তাকে বাড়ি ফেরার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অস্ত্রোপচারের পরে প্রথম দিন বেরিয়েই কেন মনুয়া ফিরতে এত দেরি করছে, তা নিয়েও বকাবকি করতে থাকেন ওর বাবা। বাধ্য হয়েই অজিতকে ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে বাড়িতে চলে যায় মনুয়া। পুলিশ জানিয়েছে, তবে মনুয়া অজিতকে বলে যায়, অনুপমের খুন দেখতে না পেলেও অন্তত শুনতে চায় সে। তাই গোটা সময়টা যেন ফোন চালু রাখে অজিত।

অনুপম খুন নিয়ে ইতিমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই খুনের বিচার চেয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিদিনের খবর পোস্ট করছেন অনুপমের ভাই। একই দাবি অনুপমের বাকি পরিবার এবং বন্ধুদের। তবে এই খুন নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কিছু অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন এক তদন্তকারী অফিসার।

পুলিশ জানিয়েছে, মনুয়ার পেটে ‘সিস্ট’ ছিল। বারাসতের এক নার্সিংহোমে তার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তার গর্ভপাত হয়েছিল বলে রটানো হচ্ছে। পুলিশের দাবি, মনুয়া জানিয়েছে, ‘‘আমি কখনওই গর্ভবতী ছিলাম না। কেরিয়ার ছেড়ে এখনই মা হওয়ার কোনও ইচ্ছে আমার নেই।’’

মনুয়ার প্রেমিক অজিত যে বিবাহিত, তা-ও জানত না মনুয়া। পুলিশের কাছে সে তথ্য জেনে মনুয়া অবাক হয়েছে বলেই দাবি তদন্তকারীদের। তবে এ দিন অশোকনগরে অজিত রায়ের প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে অজিত সম্পর্কে কিছুই জানাতে চাননি তিনি। শুধু বলেছেন, ‘ওর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’ আর অজিতের শ্বশুরবাড়ি গেলে তার শাশুড়ি জানান, ‘বছর খানেক হল আমার মেয়ের সঙ্গে অজিতের কোনও সম্পর্ক নেই। ওর খারাপ মানসিকতা, কুকর্মের জন্যই আমার মেয়ে ওর সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখে না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Social Media Domestic Violence Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE