শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার রাজ্যের জিপি-কে (গভর্নমেন্ট প্লিডার) নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মুখবন্ধ খামে এই ব্যাপারে রিপোর্ট জমা দিতে। একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শেষ করতে হবে।
ওই উন্নয়ন পর্ষদে একশো কোটিরও বেশি টাকা তছরুপ হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে চারটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলির শুনানি চলছে এক সঙ্গে। এ দিন একটি মামলার আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে অভিযোগ জানান, আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে সিআইডি, কিন্তু কী তদন্ত হচ্ছে, সেই ব্যাপারে আদালত রিপোর্ট দিতে এর আগে নির্দেশ দিলেও সেই রিপোর্ট জমা পড়েনি।
জিপি অভ্রতোষ মজুমদার জানান, আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সিআইডি তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। দুর্নীতিতে রাজ্যের এক জন আইএএস অফিসার জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) বেআইনি ভাবে টাকা পাচারের আইনেও মামলা দায়ের করেছে। ইডি-র হাতে সব নথিও তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “উচ্চ আদালতের নির্দেশের চটজলদি প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব নয়। এটা সকলকে মনে রাখতে হবে, রাজ্য সরকারই এসজেডিএ-র ঘটনার তদন্ত শুরু করিয়েছে।”
এসজেডিএ সূত্রের খবর, ২০১৩-এর ১৬ মে এসজেডিএ-র উন্নয়নের বহু কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে এফআইআর করেন সংস্থার তৎকালীন সিইও শরদ দ্বিবেদী। পর্যায়ক্রমে ৮টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। গ্রেফতার হন এসজেডিএ-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, দুই সহকারী ইঞ্জিনিয়ার সপ্তর্ষি পাল ও প্রবীণ কুমার, প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণ কুমার, ঠিকাদার শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্ত, অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ১৪ জন। পুলিশি জেরার মুখে পড়েছেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার ও তৃণমূলের জলপাইগুড়ির সাংগঠনিক সভাপতি চন্দন ভৌমিক।
মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকে এই মামলায় গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মাথায় বদলি করে দেওয়া হয় শিলিগুড়ির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে। এর পরেই তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের সদিচ্ছা কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম-সহ বিরোধী দলের নেতারা। এসজেডিএ মামলার সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়। একটি মামলা করেছেন কংগ্রেসের শিলিগুড়ির নেতা সুজয় ঘটক। পৃথকভাবে একই আবেদনে মামলা করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যরা। প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর দাবি, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে জয়রামনকে সরিয়ে দেওয়ার পরে তদন্ত কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে এসজেডিএ-র অন্দরেই। কারণ, পুলিশ কমিশনার বদলি হওয়ার পরে ওই মামলায় সন্দেহভাজন আর কেউ গ্রেফতার হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy