Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভটকলকে এখন হাতে পাচ্ছে না লালবাজার

আমেরিকান সেন্টারের সামনে হামলার চক্রীদের বাদ দিলে তার সমতুল্য সন্ত্রাসবাদী অন্তত কলকাতা পুলিশের তৈরি অভিযুক্ত-তালিকায় নেই। দেশের বিভিন্ন শহরে নাশকতায় অভিযুক্ত ইয়াসিন ভটকল কলকাতা থেকেও বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

আমেরিকান সেন্টারের সামনে হামলার চক্রীদের বাদ দিলে তার সমতুল্য সন্ত্রাসবাদী অন্তত কলকাতা পুলিশের তৈরি অভিযুক্ত-তালিকায় নেই। দেশের বিভিন্ন শহরে নাশকতায় অভিযুক্ত ইয়াসিন ভটকল কলকাতা থেকেও বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাড়ে তিন বছর আগে ধরা পড়া সত্ত্বেও ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) –এর চাঁই সেই ভটকলকে এখনই হাতে পাচ্ছে না লালবাজার।

হায়দরাবাদের দিলসুখনগরে জোড়া বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ শাগরেদের সঙ্গে ভটকলকে গত ডিসেম্বরে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এই মাসের গোড়ায় তাকে হায়দরাবাদের চেরলাপল্লি জেল থেকে দিল্লির তিহড় জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে তার নাম জড়ানো সত্ত্বেও তাকে হাতে পেতে কেন এত দেরি হচ্ছে লালবাজারের?

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রের খবর, হায়দরাবাদের পরে দিল্লি, মুম্বই, বারাণসী, পুণে ও বেঙ্গালুরুর পালা। ওই সব শহরেই বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত ভটকল। সেই সব মামলার নিষ্পত্তির আগে লালবাজারের পক্ষে ইয়াসিনকে হাতে পাওয়া মুশকিল বলে জানাচ্ছে এনআইএ।

লালবাজারের খবর, ২০১৩-র ৬ জুলাই রুজু হওয়া একটি মামলায় (স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স থানা, কেস নম্বর ১০) অভিযুক্তের তালিকায় ইয়াসিনের নাম আছে তিন নম্বরে। এসটিএফ ওই দিন বি বা দী বাগে আনোয়ার হোসেন মল্লিক নামে নদিয়ার চাপড়ার এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। তার কাছে প্লাস্টিকের কৌটোয় ছিল বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। বাংলাদেশের চুয়াডাঙা জেলা থেকে সে ওই বিস্ফোরক এনেছিল। আনোয়ারকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, খালিক নামে ইয়াসিন ভটকলের এক শাগরেদকে তার ওই বিস্ফোরক দেওয়ার কথা ছিল।

জেরায় আনোয়ার আরও জানায়, ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে সায়েন্স সিটির কাছে একটি চায়ের দোকানের সামনে দেখা করে ইয়াসিন তার কাছ থেকে আট কেজি আরডিএক্স নিয়ে যায়। খালিকও ছিল সঙ্গে। আনোয়ারের সঙ্গে শাগরেদের আলাপ করিয়ে দিয়ে ইয়াসিন বলেছিল, এ বার থেকে খালিক-ই বিস্ফোরক নিয়ে যাবে।

২০১৩-র ২৮ অগস্ট বিহারে নেপাল সীমান্তে ধরা পড়ে ইয়াসিন। লালবাজারের গোয়েন্দারা দিল্লিতে এনআইএ-র হেফাজতে থাকা ইয়াসিনকে জেরা করেন। ইয়াসিনের দাবি, ২০০৯ সালে আনোয়ারের এনে দেওয়া বিস্ফোরক কোনও হামলায় ব্যবহার করা যায়নি। নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় সেই বিস্ফোরক নদীতে ফেলে নষ্ট করা হয়। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, যদি ধরে নেওয়া যায় ইয়াসিন মিথ্যে বলেছে, তাতেও বোঝা যায়, এই শহরের পথ কেবল বিস্ফোরক নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই শহরে কোনও বিস্ফোরণ হয়নি। ‘‘যে-সব শহরে বিস্ফোরণে প্রাণহানি হয়েছে, সেখানে ইয়াসিনের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলাগুলি অগ্রাধিকার পাবে। আমরা তার পরে ইয়াসিনকে পেতে পারি,’’ বলছেন ওই অফিসার।

বাংলাদেশ থেকে যে-লোকটি আনোয়ারের হাত দিয়ে ইয়াসিনের জন্য বিস্ফোরক পাঠাত, সেই মহম্মদ জাহিদ হোসেন ধরা পড়ে ২০১৪-র জুলাইয়ে। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘খালিক এখন কোথায়, ইয়াসিন ক’বার কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে গিয়েছিল, কলকাতায় তার ডেরা কোথায় ছিল— এ-সব জানতেই ইয়াসিনকে হেফাজতে পাওয়া জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Yasin Bhatkal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE