Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রোজ ভ্যালিতেও কুণাল টানলেন মুখ্যমন্ত্রীর নাম

সারদা কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে লাগাতার অভিযোগের তির ছুড়েছেন কুণাল ঘোষ। এ বার অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির কাজ কারবারেও মুখ্যমন্ত্রীর ‘যোগ’ নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই রাজ্যসভার সাংসদ। রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তিনি জড়িয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ও তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের নামও। সোমবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুণালকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল।

বিচার ভবনে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

বিচার ভবনে কুণাল ঘোষ। সোমবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৭
Share: Save:

সারদা কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে লাগাতার অভিযোগের তির ছুড়েছেন কুণাল ঘোষ। এ বার অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির কাজ কারবারেও মুখ্যমন্ত্রীর ‘যোগ’ নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া এই রাজ্যসভার সাংসদ। রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তিনি জড়িয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ও তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের নামও।

সোমবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুণালকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিকেলে জেলে ফেরানোর জন্য গাড়িতে তোলার সময় সাংবাদিকেরা রোজ ভ্যালি-কাণ্ড প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চান। কুণাল বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালি নিয়ে কিছু জানি না। যাঁরা জানেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’’

তাঁরা কারা? কুণাল তাপস পাল, মদন মিত্র ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেন। কেন তিনি এমন বলছেন, তা জিজ্ঞাসা করা হলে কুণাল আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে ঠেলে প্রিজন ভ্যানে ঢুকিয়ে দেয়।

কুণালের এ হেন মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের কোনও নেতা আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলতে চাননি। যদিও তৃণমূল সূত্রের দাবি, কুণালের কথায় দল গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাপস পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। এ সব ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’’ আর মদন মিত্রের কৌঁসুলি মিলন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এক জন অভিযুক্তের মুখে এই সব কথাবার্তার তথ্য-প্রমাণগত মূল্য নেই। রোজ ভ্যালি সংশ্রব প্রসঙ্গে তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসুর নামও এ দিন কুণালের মুখে শোনা গিয়েছিল। সৃঞ্জয়বাবু জানান, নেহাত পেশাগত সূত্রেই তিনি রোজ ভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে চিনতেন, তার বাইরে কোনও সম্পর্ক ছিল না।

সারদা-মামলায় ধৃত কুণাল ঘোষ একাধিক বার প্রকাশ্যে দাবি করেছেন যে, সারদা-কাণ্ডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জড়িত। এক বার আদালত থেকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই অফিসে ঢোকার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘সারদার সংবাদমাধ্যম থেকে কেউ যদি সব চেয়ে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

এর পরেও আদালতের ভিতরে-বাইরে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার অনেকের দিকে আঙুল তুলেছেন কুণাল। তিনি যাতে এজলাসের বাইরে কিছু বলতে না পারেন, এবং বললেও যাতে তা সংবাদমাধ্যমের কানে না যায়, সে জন্য পুলিশও কোমর বেঁধে নামে। কুণাল সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুললেই তাঁর কণ্ঠস্বর চাপা দিতে একযোগে চিৎকার কিংবা গাড়ির গায়ে চাপড় মেরে ধাঁই ধপাধপ আওয়াজ তুলতেও কসুর করেননি আইনরক্ষকেরা।

এ দিনও কুণাল মুখ্যমন্ত্রীর নাম তুলতেই তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পুলিশকর্মীরা তৎপর হয়ে ওঠেন। বেলা এগারোটা নাগাদ কুণালকে যখন প্রেসিডেন্সি জেল থেকে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে নিয়ে আসা হয়, তখন অবশ্য তিনি কিছু বলেননি। আগে বিভিন্ন হাজিরার দিনে এজলাসের ভিতরে নানা বিষয়ে যে ভাবে তাঁকে মুখর হতে দেখা গিয়েছে, এ দিন তাতেও ব্যতিক্রম! এজলাসে কুণাল কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন!

এ দিন সারদার অন্যতম কর্তা মনোজ নাগেলের হাজিরা নিয়ে দমদম জেল কর্তৃপক্ষ কার্যত আদালতের ক্ষোভের মুখে পড়েন। সুদীপ্ত-কুণাল-দেবযানীর সঙ্গে মনোজকেও এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল। তা দেখে মনোজের কৌঁসুলি অনির্বাণ গুহঠাকুরতা প্রশ্ন তোলেন, সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় মনোজ এখনও অভিযুক্ত নন। তা হলে তিনি কোর্টে কেন? বিচারক কি ওঁকে হাজির করতে বলেছেন? বিচারক অরবিন্দ মিশ্র বলেন, এমন নির্দেশ তিনি দেননি। বিচারক সিবিআইয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যুরোর কৌঁসুলি অঙ্কুশ সরকার বলেন, মনোজকে হাজির করার কোনও নির্দেশ তাঁরাও জেলকে পাঠাননি।

এমতাবস্থায় মনোজকে অবিলম্বে কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। ঘটনাটির ব্যাখ্যা চেয়ে দমদম সেন্ট্রাল জেলের সুপারকে আগামী ২০ এপ্রিল আদালতে তলব করা হয়েছে। সুদীপ্ত-কুণাল-দেবযানীর জেল হেফাজতের মেয়াদও বেড়েছে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।

জামিন হয়নি লগ্নি-কর্তার

বাবার অন্ত্যেষ্টি ও শ্রাদ্ধের জন্য ১৪ দিনের অন্তর্বর্তী জামিন চেয়েছিলেন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। কলকাতার নগর দায়রা আদালত সোমবার তা খারিজ করে দিয়েছে। অবৈধ ভাবে টাকা পাচারের অভিযোগে গৌতমকে ২৫ মার্চ গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। ধৃতের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র। গৌতমের তরফে পুলিশি পাহারায় শেষকৃত্যে তাঁর উপস্থিত থাকার অনুমতি চাওয়া হয়। ইডি-র আইনজীবী জানান, আদালত অনুমতি দিলে অভিযুক্ত পুলিশি প্রহরায় তাঁর বাবার অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে পারেন। মানবিক কারণেই ইডি তার বিরোধিতা করবে না। আদালত জানায়, এর জন্য আলাদা আবেদন করতে হবে। মুচলেকা দিলে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার অভিযুক্তকে পুলিশি পাহারায় অন্ত্যেষ্টি ও শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে পাঠাবেন। তবে সেই পৃথক আবেদন করা হয়েছে কি না, রাত পর্যন্ত গৌতমের কৌঁসুলিরা তা জানাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE