Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে শৌচাগার নেই, দুল বন্ধক রাখলেন সুবেদা

মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পড়া দুই মেয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি কোন মুখে অন্যদের বলো, মা?’ শেষমেশ বিয়েতে পাওয়া ‘সবেধন নীলমণি’ এক জোড়া সোনার দুল বাঁধা দিয়েই বাড়িতে শৌচাগার গড়াচ্ছেন সুবেদা।

শৌচাগারের সামনে সুবেদা।—নিজস্ব চিত্র।

শৌচাগারের সামনে সুবেদা।—নিজস্ব চিত্র।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

রোজ ভোরে মাঠে-মাঠে তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কে প্রাতঃকৃত্য সারতে এসেছে। ধরে সতর্ক করছেন, ‘এ সব আর চলবে না!’

‘নির্মল বাংলা’র মিছিলেও তাঁকে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। ‘নির্মল জেলা’ হওয়ার দৌড়ে এখন প্রায় শেষ ল্যাপে মুর্শিদাবাদ। প্রচার তুঙ্গে। তিনি সেই প্রচারেরই এক সৈনিক।

অথচ নিজের বাড়িতেই শৌচাগার নেই হরিহরপাড়ার সুবেদা বিবির!

মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পড়া দুই মেয়ে তাঁকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি কোন মুখে অন্যদের বলো, মা?’ শেষমেশ বিয়েতে পাওয়া ‘সবেধন নীলমণি’ এক জোড়া সোনার দুল বাঁধা দিয়েই বাড়িতে শৌচাগার গড়াচ্ছেন সুবেদা।

‘নির্মল জেলা’ অভিযানে সুবেদা জড়িয়ে পড়েছিলেন একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী হওয়ার সুবাদে। গত ১৫ নভেম্বর থেকে ব্লক অফিসে তাঁর প্রশিক্ষণ চলেছে। তাঁদের বাড়ি ছিল আদতে ধরমপুর এলাকার শঙ্করপুরে। বছরখানেক আগে এক শতক জমিতে ঘর তুলে চলে আসেন হরিহরপাড়ার উত্তরপাড়ায়। সেখানে মাথার উপরে ছাদ হয়েছিল, কিন্তু শৌচাগার হয়নি।

মাঝ-তিরিশের সুবেদার কথায়, ‘‘দুই মেয়ে বড় হয়েছে। শৌচাগার না আমারও থাকায় সমস্যার শেষ ছিল না। তবু ওই ভাবেই চলছিল। কিন্তু ভোর থেকে সন্ধে লোককে বলে বেড়াচ্ছি শৌচাগার তৈরির কথা অথচ নিজেরই নেই, এটা খুবই লজ্জার।’’

ব্লক প্রশাসন সুবেদাকে প্রচারে নামিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আগেভাগে তালিকায় নাম না ওঠায় শৌচাগার তৈরির টাকা দেবে না। স্বামী মেসের আলি দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালান। তিনি বাড়তি টাকা দিতে পারবেন না। খোঁজখবর নিয়ে সুবেদা জানেন, শৌচাগার গড়তে হলে নিদেনপক্ষে সাড়ে চার হাজার টাকা লাগবে। কোথায় পাবেন? ‘‘বিয়েতে পাওয়া কানের দুল নিয়ে পরিচিত একটি সোনার দোকানে গেলাম। ওরা দেখে বলল, ওজন চার আনা। ওটা রেখে পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারবে। তাতেই রাজি হয়ে গেলাম’’— খানিক তৃপ্তি নিয়েই হাসেন সুবেদা।

সেই টাকায় শৌচাগার গড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সুবেদার মেয়ে, দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া শর্মিলা খাতুনের কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলেও তো নির্মল বাংলার প্রচার চলছে। রাস্তায় প্রায়ই পদযাত্রা বেরোচ্ছে, মা-ও যাচ্ছে। কিন্তু নিজেদের বাড়িতেই শৌচাগার নেই, এতে খুবই খারাপ লাগছিল। কাজ শুরু হতে স্বস্তি পেয়েছি।’’

হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘সোনা বাঁধা দিয়ে টাকা ধার করা মোটেই ভাল কাজ নয়। কিন্তু এতে কাজটার প্রতি ওঁর নিষ্ঠা আর জেদই ফুটে উঠেছে। ঘরে-ঘরে যদি আরও এমন সুবেদা বিবিরা থাকেন, বাংলা নির্মল হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmal Bangla Toilet Mortgage Earrings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE