বিক্ষোভ: ধর্মতলার মিছিলে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে সারদার সঙ্গে নারদ-কাণ্ডও ছিল তাদের প্রচারের বড় হাতিয়ার। তার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিপুল জয় বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ের জেরে ফের নারদ-হুল ফিরে এল বিরোধীদের হাতে! অভিযুক্ত মন্ত্রীদের ইস্তফা বা অপসারণ দাবি করে রাস্তায় মিছিল, রাজভবনে দরবার— সবই জোর কদমে শুরু হয়ে গেল শুক্রবার।
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছিল কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে। নারদ-কাণ্ডে জনস্বার্থের মামলায় অন্যতম আবেদনকারী ছিলেন আর এক প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী। দুই ক্ষেত্রেই আইনি লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা ছিল সিপিএমের আইনজীবী-নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যের। কাজেই সারদা ও নারদ, জোড়া মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে কংগ্রেস ও বাম শিবির তাদের লড়াইয়ের ফসল হিসাবেই দেখছে।
বিরোধীদের এখন মূল প্রশ্ন দু’টো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা গত বছর দাবি করেছিলেন, নারদের ফুটেজ জাল। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যখন জানিয়ে দিয়েছে ফুটেজে কোনও জালিয়াতি হয়নি, তখন মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপ জানতে চায় তারা। আর দ্বিতীয়ত, বিধানসভা ভোটের প্রচারে মমতা মন্তব্য করেছিলেন, আগে জানলে অভিযুক্তদের তিনি টিকিট দিতেন না। বিরোধীদের দাবি, হাইকোর্ট এমন দুর্নীতির মামলায় কড়া মন্তব্য করার পরে মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত নেতা-সাংসদদের সাসপেন্ড করুন।
আরও পড়ুন: স্টিং অপারেশন’-এ অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া, সে দিন আর এ দিন
বিরোধী দলনেতা মান্নান এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিন্দুমাত্র সৎসাহস থাকলে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের সাসপেন্ড করুন। আর তৃণমূল কর্মীদের কাছে জিজ্ঞাসা, এই নেতাদের সমর্থনে তাঁরা কি আবার মিটিং-মিছিল করবেন?’’ নারদ-কাণ্ডে দলের পরবর্তী রণকৌশল কী হবে, তা নিয়ে এ দিনই দিল্লিতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা অহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মান্নান। অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্ত করার দাবিতে শীঘ্রই কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজ্যপালের কাছে দরবার করবেন। সেই কাজই এ দিন সেরে নিয়েছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে বাম পরিষদীয় দলের তরফে তাঁর দাবি, মন্ত্রী-পদে থেকে তদন্তের মুখোমুখি হওয়া হাস্যকর। তাঁরা নিজেরা সরে না দাঁড়ালে তাঁদের অপসারণ করা হোক।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরিই মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করেছেন তদন্তের মুখোমুখি হতে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত যা বলেছেন, তা আগাগোড়া স্ববিরোধিতায় ভর্তি! কেন এত দিন অভিযুক্তদের আড়াল করেছেন? ওঁকেও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।’’ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, তৃণমূলের নেতারা দলের জন্য ‘ডোনেশন’ নিয়েছিলেন। যার সূত্রে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তা হলে আইপিএস এস এইচ মির্জা কীসের ডোনেশন নিয়েছেন?’’ পাশাপাশিই, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, অভিযুক্ত নেতারা জনগণের রায়ে জিতে এসেছেন। সেটাই নির্দোষের মাপকাঠি হলে তো গুজরাত দাঙ্গার পরে নরেন্দ্র মোদীও জিতে এসেছেন!’’
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলায় রাস্তায় নেমে হইচই করা এখন সমস্যা। তার মধ্যেও এ দিনই ধর্মতলা থেকে মৌলালি পর্যন্ত কলকাতা বামফ্রন্টের মিছিলে হেঁটেছেন সূর্যবাবু, বিমানবাবুরা। সল্টলেকে সিবিআই দফতরের সামনে বিক্ষোভ জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে সোমবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy