তদন্তের পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) নীলাঞ্জন বিশ্বাস। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে বাইরে চলে গিয়েছেন, বৃদ্ধ বয়সে একা দিন কাটাচ্ছেন দম্পতি। আধুনিক শহুরে যাপনে এ চিত্র ব্যতিক্রমী নয়। এবং এই পরিস্থিতি রীতিমতো অসহায়তার মুখে দাঁড় করায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে। সেই অসহায়তার মাত্রা আরও বাড়ায় শারীরিক অসুস্থতা। পর্ণশ্রীর ওই বৃদ্ধ দম্পতির ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে।
আমার অনুমান, স্ত্রীর দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে ওই বৃদ্ধ হয়তো মানসিক ভাবে প্রস্তুত হয়েই ছিলেন, স্ত্রী আগে মারা গেলে তিনিও নিজেকে শেষ করে ফেলবেন। কারণ গলা কাটা অন্য পদ্ধতিতে আত্মহত্যা করার মতো তাৎক্ষণিক ও সহজ নয়। এ জন্য প্রস্তুতি লাগে। এমনও হতে পারে, বৃদ্ধ আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে। তা হলে সমস্যা আরও বাড়বে। মৃত্যু নিশ্চিত করতেই হয়তো এমন নৃশংস পথ বেছে নেওয়া। ইদানীং শেষ বয়সে একা বৃদ্ধের
করুণ পরিণতির কথা শোনা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে। সে সব থেকেই হয়তো ওই বৃদ্ধের মনে তীব্র আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, স্ত্রী চলে গেলে তাঁর একা বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
শেষ বয়সে যখন কেবল দু’জনই দু’জনের অবলম্বন হয়ে ওঠেন, তখন দু’জনেরই এমন চিন্তা আসে— ‘‘ও চলে গেলে আমি কী ভাবে বাঁচব’’। অনেক সময় জীবনসঙ্গীকে দেখভাল করার কর্তব্যটুকুই বেঁচে থাকার কারণ হয়ে থাকে নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার। সেই কারণ ফুরোলে নিজের বেঁচে থাকাও অর্থহীন বলে মনে হয়। এ ক্ষেত্রে তেমনটাও হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
পর্ণশ্রীর এই ঘটনায় বৃদ্ধ চোখের সামনে দেখেছিলেন স্ত্রী একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন। এটা চরম অবসাদের কারণ হতে বাধ্য। তবে এই বয়সে অবসাদ চট করে চিহ্নিত হয় না। আর এই অবসাদের সঙ্গেই যোগ হয় আশঙ্কা, স্ত্রী চলে যাওয়ার পরে তাঁর নিজেরও যদি এমন হয়, তা হলে কে দেখভাল করবে। হয়তো ভেবেছেন, তিনি বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন সন্তানদের কাছে। এই ঘটনায় শোনা যাচ্ছে ছেলেমেয়েদের কেউই মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন না। ফলে একা এবং অসহায় হয়ে পড়ার আশঙ্কাটা আরও বেশি ছিল। দীর্ঘ দিনের এই অবসাদ আর আশঙ্কা একসঙ্গে মিলেই সম্ভবত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে বৃদ্ধকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy