Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর নাক কাটল নষ্ট খাবার

ভাতের প্যাকেট খুলতেই ভক করে নাকে আঘাত হানল দুর্গন্ধ। জিভে ঠেকাতেই মালুম হল, টকে গিয়েছে ডাল। একে একে খোলা হল পনির, মাংস ও তরকারির প্যাকেট। নষ্ট হয়ে গিয়েছে সব ক’টি পদই। রাতের রাজধানী এক্সপ্রেসে শুরু হয়ে গেল চেঁচামেচি, হইহট্টগোল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

ভাতের প্যাকেট খুলতেই ভক করে নাকে আঘাত হানল দুর্গন্ধ। জিভে ঠেকাতেই মালুম হল, টকে গিয়েছে ডাল। একে একে খোলা হল পনির, মাংস ও তরকারির প্যাকেট। নষ্ট হয়ে গিয়েছে সব ক’টি পদই। রাতের রাজধানী এক্সপ্রেসে শুরু হয়ে গেল চেঁচামেচি, হইহট্টগোল।

মাথায় উঠল খাওয়া। ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে পেটে কিল মেরে কৌতূহলী কিছু যাত্রী এগিয়ে গেলেন পাশের কামরার দিকে। দেখা গেল, সেখানকার যাত্রীদেরও একই অভিজ্ঞতা। কয়েক জন দু’চার গ্রাস খেয়ে ফেলার পরে নাগাড়ে বমি করে চলেছেন। তাঁদের সামলাতে ব্যস্ত অন্যেরা। অভিযোগ জানাতে এবং বিকল্প খাবারের বন্দোবস্ত করা যায় কি না, তা জানতে খোঁজ পড়ল প্যান্ট্রিকারের ম্যানেজার এবং ট্রেন ম্যানেজারের। বেগতিক দেখে ওই দুই কর্তা বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের কামরার দিকে ঘেঁষলেন না। বারবার বলা সত্ত্বেও অভিযোগের খাতাও তাঁদের দেওয়া হয়নি বলে জানালেন যাত্রীরা।

সোমবার রাতে দিল্লি থেকে ছাড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান কানপুর, আসানসোল, শিয়ালদহে। তাঁদের বক্তব্য, সফরের সময় যত এগোয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তা সত্ত্বেও রাজধানীর মতো কুলীন ট্রেনেও খাবার মুখে তুলতে পারছেন না যাত্রীরা। ওই ট্রেনে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন মোনালিসা দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘বি-৭, ৮, ৯, ১০ কামরায় খাবার নিয়ে গোলমাল হয়েছে। ভাত, তরকারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাতে কিছুই খাওয়া হয়নি।’’ একই অভিযোগ গোরক্ষপুরের বাসিন্দা নৃপেন্দ্র ঠাকুরের। বি-৮ কামরার ওই যাত্রী জানান, প্যান্ট্রি থেকে খুবই নিম্ন মানের ভাত-ডাল দেওয়া হয়েছিল। নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো একদমই খাওয়া যায়নি।’’ নৃপেন্দ্রবাবুর সঙ্গে ছিল তাঁর ছোট ছেলে। সঙ্গে থাকা কিছু শুকনো খাবার খেয়েই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা।

খাবার-বিভ্রাট: নষ্ট খাবার দিয়েছে রাজধানী। মুড়ি খেয়ে রাত্রিযাপন। মঙ্গলবার শিয়ালদহে নেমে ক্ষোভ যাত্রীদের।— নিজস্ব চিত্র

ট্রেন শিয়ালদহে পৌঁছনোর পরে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যাত্রীরা। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া হবে খাবার সরবরাহকারী সংস্থাকে।’’ রাজধানীর ঘটনা কানে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। তিনি এই বিষয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

ট্রেনের খাবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রী-অসন্তোষ চলছে। রেলের কেটারিং নীতিও পাল্টাচ্ছে বারবার। কিন্তু খাবারের মান উন্নত হচ্ছে না। সম্প্রতি নতুন কেটারিং নীতি ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। খাবারের দায়িত্ব পুরোপুরি দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে কেটারিং ও ট্যুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি-কে। কিন্তু পূর্ব রেলের অনেক ট্রেনে এখনও রেলেরই নিয়োগ করা ঠিকাদারেরা খাবার দেন। শিয়ালদহ রাজধানী আছে সেই তালিকায়।

আরও পড়ুন: পুলিশ ঠুঁটো, শিশু বিক্রির চক্র উধাও

রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, পূর্ব রেলের একাধিক ট্রেনে একটি মাত্র সংস্থাই বিভিন্ন নামে খাবারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একচেটিয়া ঠিকাদারি চলছে। তার উপরে রেলের তরফে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা না-থাকায় বিভিন্ন ট্রেনে এই ধরনের বিপত্তি ঘটছে। যাঁদের এটা দেখভাল করার কথা, রেলের সেই বাণিজ্যিক বিভাগের মূল পদে স্থায়ী ভাবে কেউ নেই। এক জন অফিসার দু’টি বিভাগ দেখছেন। ফলে যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে।

বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও যাত্রীদের যে-দুর্দশায় পড়তে হচ্ছে, তা নিয়ে হেলদোল নেই পূর্ব রেলের কর্তাদের। উল্টে কোনও কোনও রেলকর্তার বক্তব্য, দেড় হাজার যাত্রীর মধ্যে দু’-এক জন অভিযোগ করতেই পারেন। কী আর করা যাবে!?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rajdhani Express Low Graded Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE