Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ময়মনসিংহের মহুয়া এ বার বন্দিদের মঞ্চে

সমবেত স্বরের বাগ্‌দেবী আবাহন লৌহকপাটের অন্দরে। দমদম জেলের ভিতরে ঢুকলেই ইটের রাস্তা। দু’ধারে সারি সারি পাম গাছ। রাস্তা ধরে একটুখানি এগোলেই ডান দিকে অডিটোরিয়াম। ইদানীং বিকেল হলেই সেখানে ঢাক-ঢোল-হারমোনিয়মের সঙ্গত।

অত্রি মিত্র
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১
Share: Save:

এসো গো মা সরস্বতী,

কণ্ঠপুরে হবো সতী...।

সমবেত স্বরের বাগ্‌দেবী আবাহন লৌহকপাটের অন্দরে। দমদম জেলের ভিতরে ঢুকলেই ইটের রাস্তা। দু’ধারে সারি সারি পাম গাছ। রাস্তা ধরে একটুখানি এগোলেই ডান দিকে অডিটোরিয়াম। ইদানীং বিকেল হলেই সেখানে ঢাক-ঢোল-হারমোনিয়মের সঙ্গত। পাম গাছের সারি ভেদ করে ভেসে আসে সমবেত সঙ্গীত।

‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ বা ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা থিয়েটারের মঞ্চে ফিরছে প্রায় তিন দশক পরে। ‘মাধব-মালঞ্চী কইন্যা’ নয়, দ্বিজ কানাইয়ের লেখা মহুয়া-গাথাকে উপজীব্য করে এ বারের নাটক ‘মহুয়া সুন্দরী’। কুশীলব ওই জেলের ২৭ জন বন্দি। তাঁদের তালিম দিয়ে তৈরি করছেন সম্রাট বসু। সঙ্গে তাঁর নাট্যদল ‘থিয়েটার ট্রাভেলার’।

আছেন আরও এক জন অন্তরালে। সারদা কেলেঙ্কারির জেরে তিনি এখন রাজ্যের অন্যতম ‘হাইপ্রোফাইল’ বন্দি— দেবযানী মুখোপাধ্যায়। অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল খুব। কিন্তু বিচারাধীন বন্দিদের অভিনয়ের অনুমতি মেলে না। এমনকী উপস্থিত থাকতে পারেন না নাটকের মহড়াতেও। তবু এই নাটকের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দেবযানী। নাটক করার জন্য বন্দিনীদের উৎসাহ দেওয়া তো আছেই। কারারক্ষীরা জানাচ্ছেন, সহবন্দি এবং বন্ধু মধুবৃতা সরখেল ‘মহুয়া সুন্দরী’ নাটকের প্রচারপত্রের ইংরেজি মুখবন্ধ তৈরি করেছেন। এবং তাতেও আছে দেবযানীর হাত।

বন্দিদের উৎসাহ দেখে বিস্মিত সম্রাট, ‘‘জানেন, নাটকে বাজাতে হবে বলে তিন মাস ধরে বাঁশি বাজানো শিখেছেন স্বরূপ বিশ্বাস! ঝাড়খণ্ডের ছেলে ভরত মাঝির ঢোল কিংবা তুহিন রায়ের গান আর হারমোনিয়ম, শ্রীকান্তের তালবাদ্য— মিলেমিশে অপূর্ব মূর্ছনা।’’ সম্রাট জানান, দমদম জেলের বন্দিদের নিয়ে এটাই তাঁর প্রথম নাট্যপ্রয়াস নয়। নান্দীকারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এর আগে সেখানে ‘ভালমানুষ’ নাটক হয়েছে। তখনই খেয়াল করেছিলেন, সকলে মিলে গানবাজনা করতে বন্দিদের উৎসাহ খুব। সম্রাট বলেন, ‘‘এ বার তাই এমন নাটক খুঁজছিলাম, যাতে প্রচুর নাচগানের সুযোগ রয়েছে। তখনই পেলাম ‘মহুয়া’। এটা যেন বন্দিদের প্রেরণা জোগাতেই লেখা।’’ সম্রাট জানান, ময়মনসিংহ গীতিকার দশটি পালার অন্যতম ‘মহুয়া’ গাথার প্রথম প্রকাশ ১৯২৩ সালে।

অভিনয়ের তেমন অভিজ্ঞতা নেই বন্দিদের। তাই নাটক তৈরির জন্য কারা দফতরের কাছে সম্রাট সময় চেয়ে রেখেছিলেন মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু ডিসেম্বরেই তৈরি মধুবৃতা, সুপান, পীযূষ, খইরুল মোল্লারা। নাটক মঞ্চস্থ হবে ২৩ জানুয়ারি, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে। দমদম জেলেই। থাকবেন নান্দীকারের তিন কাণ্ডারী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত ও সোহিনী সেনগুপ্ত। সম্রাটের চেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে সোহিনী বললেন, ‘‘গান, বাজনা, নাটকের মধ্যে থাকলে বন্দিদের সময়টা খুব ভাল কাটে। এই ধরনের কাজ যত হয়, ততই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maimansingha Gitika Prisoners Dumdum Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE