মিরিকের সভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরূপ বিশ্বাস। ছবি: সন্দীপ পাল
এক বার জয়। তার পরের দু’বার হার। অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে গত সাড়ে চার বছরের লড়াইয়ে এটাই আপাতত তৃণমূলের স্কোরবোর্ড।
সামনে ফাইনাল ম্যাচ। তারই হাওয়া তুলতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে অবশ্য ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে পড়েছেন দলে দার্জিলিং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অরূপ বিশ্বাস, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং যুব নেতৃত্বের মুখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিলিগুড়িতে এই টিমের প্রধান প্রতিপক্ষ যিনি, সেই অশোক ভট্টাচার্য কিন্তু কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শাসক দলের থেকে এক ধাপ এগিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর ২৪ ঘণ্টা আগে পুরোদস্তুর পথে নেমেছেন তিনি। এবং উত্তরবঙ্গে এই মুহূর্তে অন্যতম চর্চার বিষয় এসজেডিএ দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে। হিলকার্ট রোড ভরিয়ে তাঁর নেতৃত্বে যে মিছিলটি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে (এনবিডিডি) যায়, তাতে সাত বিধানসভার (এসজেডিএ-র আওতায় আসে যেগুলি) লোকই ছিল। এই দৌড় তিনি চালিয়ে যাবেন। আজ থেকে তাঁর লাগাতার কর্মসূচি চলবে শহরের সব ওয়ার্ডে।
শিলিগুড়ি পুরভোট এবং মহকুমা পরিষদের ভোটে তাঁর মডেল-ই এখন সুপার হিট। সেই মডেলকে সামনে রেখে গোটা রাজ্যে সিপিএম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে যে হাওয়া উঠেছে, সেটাই ভাবাচ্ছে টিম মমতাকে। তৃণমূল নেত্রী নিজে তো বটেই, তাঁর ভাইপো অভিষেকও এই জোটের সম্ভাবনাকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি। যা দেখে বাম, কংগ্রেস দু’পক্ষ থেকেই প্রশ্ন উঠছে— জোট নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের এত মাথাব্যথা কেন? তা হলে কি হারের ভয় পাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী?
বিরোধীদের তরফে আরও দাবি, যে ভাবে সিপিএমের সাম্প্রতিক সভা-সমাবেশে ভিড় বাড়ছে, তাতে শাসক দলের হাড়ে কাঁপুনি ধরা স্বাভাবিক। শিয়রে নির্বাচন কমিশনের হুঁশিয়ারি রয়েছে। তাই সেই জাঠার সময় থেকে দলের লোকজনকে সংযত হতে বলেছেন মমতা। আর তৃণমূলের চোরাগোপ্তা বা সরাসরি হুমকি-হুঁশিয়ারি বন্ধ হতেই পথে নামছে মানুষ। বামেদের দাবি, সেই ছবিই দেখা গিয়েছে সিঙ্গুর থেকে শালবনির মিছিলে। সেটাই দেখা গিয়েছে বুধবার, অশোক ভট্টাচার্য-জীবেশ সরকারের নেতৃত্বে বামেদের অভিযানেও।
শিলিগুড়িতে বামেদের এসজেডিএ অভিযানে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, ভোটের আগে দলীয় নেতৃত্ব এমন ভুল করতে রাজি নন, যাতে আঙুল ওঠে তাঁদের দিকে। বরং সরাসরি মাঠে নেমে অশোকবাবুদের চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন তাঁরা। তৃণমূল নেত্রীর কৌশল, প্রথমে দলীয় পর্যবেক্ষককে পাঠিয়ে ভিত তৈরি করা। যেমন এসেছেন অরূপ। তার পরের ধাপে পাঠালেন অভিষেকের মতো দলের যুব মুখ এবং পার্থর মতো প্রবীণ নেতাকে। এর পরে মমতা নিজে আসছেন। বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিনের সফর। যে সফরে সঙ্গী হচ্ছেন মুকুল রায়।
এটা যে আদতে মমতার শিলিগুড়িতে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের সফর, সেটা মনে করছেন শহরের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, সরিয়া সাফারি পার্ক উদ্বোধন থেকে শুরু করে যাবতীয় সরকারি অনুষ্ঠানের মধ্যেও সেই সুরটা বাঁধা থাকবে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কথায়, গত পুর ও মহকুমা পরিষদের ভোটে অশোক-ব্রিগেডের কাছে হারের পরে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার নেতা-কর্মীদের মনোবলটাই প্রায় তলানিতে চলে গিয়েছে। অরূপ-পার্থ-অভিষেকদের পাঠিয়ে সেই আত্মবিশ্বাসটাই চাগিয়ে তুলতে চাইছেন নেত্রী। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, নেত্রী বিশ্বাস করেন, খেলাটা ঠিকমতো ধরতে পারলে এ বারেও শিলিগুড়িবাসী বুঝিয়ে দেবেন, অশোককে তাঁদের অপছন্দ। সে জন্যই এত আগে থেকে এত আয়োজন।
অশোক কী বলছেন? ক্রিকেটপ্রেমী শিলিগুড়ির মেয়রের সরস মন্তব্য, ‘‘আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে। তা হলে রান আসবেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy