গুজরাতে বিধানসভা ভোটের জন্য কেন সংসদের শীতকালীন অধিবেশন ডাকা যাবে না, একই সুরে সেই প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি-বিরোধী সব দল। সংসদ খুললেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চেপে ধরার যাবতীয় প্রস্তুতিও চলছে। সেই সময়েই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর চ়়ড়ানোর পরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রীর এমন আক্রমণ সাম্প্রতিক কালে প্রথম। তাঁর এই বক্তব্যকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা চেয়ে বুধবার বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল বাম ও কংগ্রেস। স্পিকার আলোচনার অনুমতি না দেওয়ায় ভিতরে বিক্ষোভ করে গত কয়েক দিনের মতোই অধিবেশন বয়কট করে বাইরে চলে যান দু’দলের বিধায়কেরা। বিধানসভায় এসে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে মুখ্যমন্ত্রী দেখেন, বাম ও কংগ্রেস বিধায়কেরা নেই। দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্রতিদিন বয়কট কেন? মূল্যবৃদ্ধির জবাব তৃণমূল দেবে কেন? সাহস থাকলে বিজেপি-র কাছে গিয়ে বলো! কাগজে ছবি তোলার জন্য বয়কট করা হচ্ছে!’’ বয়কটের নীতি লজ্জার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যা বলার, ভিতরে এসে বলো!’’ অতীতে তাঁরা বয়কটের পথে যেতেন না বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
এর পরেই কংগ্রেসকে আলাদা করে নিশানা করেন মমতা। কংগ্রেসকে বিঁধে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংসদে তৃণমূলকে ছাড়়া চলে? দিল্লিতে তোমাদের সহযোগিতা করব। আর এখানে তোমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করবে, তা হয় না! এ বার জবাব দিয়ে দেব!’’ তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংসদে কক্ষ সমন্বয়ের কৌশল নিয়েও নতুন করে ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্যের শাসক দল। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে। তাঁর সরকারের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা নিতে রাজি হওয়ায় রাষ্ট্রপতির প্রতি তিনি যে কৃতজ্ঞ, কোবিন্দের হাতে ফুল দেওয়ার ছবি পোস্ট করে সে কথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আঁকা ছবির প্রতি-উপহার হিসাবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ছবির কথাও জানিয়েছেন। উল্টো দিকে, বিজেপি-ও হরিয়ানার সেই নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে, যিনি মমতার নাক কাটার হুমকি দিয়েছিলেন। এই ঘটনাপ্রবাহ নেহাতই কাকতালীয় কি না, প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
কংগ্রেসের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করার ফাঁকেই পুরনো ঘটনা টেনে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি বিরোধী দলের ঘরে (বিধানসভায়) গিয়েছিলাম বাম আমলে আমাদের ১৯ জন বিধায়কের মাইনে কেটে নিয়েছিল! পার্থদা’কে বলেছি, ওরা ভুল করলেও আমরা অবশ্য সেই পথে যাব না।’’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২৩৫ নিয়ে যে সংখ্যার গরিমা দেখিয়েছিলেন, তা-ও তিনি দেখাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন মমতা।
বিরোধীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া জবাব দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস কখনওই তৃণমূলের মুখাপেক্ষী নয়। উনি ২০১২ সালে ইউপিএ-২ ছেড়ে চলে আসার পরেও সরকার পড়ে যায়নি। আর আমরা কোনও দিন বিজেপি-র হাত ধরিনি। তৃণমূলের আঁতুড় ঘরেই বিজেপি ছিল!’’ সেই ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর মমতার উপস্থিতিতে বিধানসভার লবিতে তৃণমূল বিধায়কদের ভাঙচুরের ছবি দেখিয়ে মান্নান চ্যালেঞ্জ করেছেন, তৃণমূল বয়কট-ভাঙচুর করেনি প্রমাণ করতে পারলে তিনি বিরোধী দলনেতার পদ ছেড়ে দেবেন! সভায় আলোচনার অনুমতি না পেয়েই বাইরে যেতে হচ্ছে বলে যুক্তি কংগ্রেস ও বামের। মান্নানের সুরেই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘তৃণমূল যত বন্ধ-অবরোধ-ভাঙচুরের রাজনীতি করেছে, ওঁর সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা কখনও তা করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy