কলকাতার টাউন হল থেকে দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। তাতে কি! বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ও পরামর্শের ঢেউয়ের রেশ পড়ল উত্তরবঙ্গেও। টিভিতে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব দেখেশুনে সঙ্গে সঙ্গেই আসরে নেমে পড়লেন উত্তরবঙ্গের একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। কেউ রিসেপশনের পাশেই পুরো দস্তুর ‘হেলপ ডেস্ক’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দারিদ্রসীমার নীচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য বাড়তি ছাড় দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন কেউ। সরকারি ও বেসরকারি নানা সূত্রে সে খবর পৌঁছেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও।
সরকারি সূত্রের খবর, যেহেতু শিলিগুড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকা বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমের উপরে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলা তো বটেই, প্রতিবেশী দেশ নেপাল-ভুটান, বাংলাদেশের লোকজনও কিছুটা নির্ভর করেন, তাই সেখানেও নজরদারির পরিধি ইতিমধ্যেই বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর কলকাতার বৈঠকের পরে উত্তরকন্যায় অনেকেই তথ্য-অভিযোগ পৌঁছতে শুরু করেছেন। কেউ উত্তরবঙ্গের কিছু নার্সিংহোমে ‘ভেন্টিলেটর’, ‘আইসিইউ’-এ রাখার নামে কী ভাবে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনতে অনুরোধ পাঠান।
উত্তরকন্যা’র এক অফিসার জানান, কেউ অভিযোগ করেছেন, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মদতেই কিছু নার্সিংহোম বেহাল পরিকাঠামো নিয়েও বহাল তবিয়তে চিকিৎসা, অস্ত্রোপচারের নামে মোটা টাকা আদায় করছে। কেউ অভিযোগ করেছেন, যথেচ্ছ প্যাথোলজিক্যাল ল্যাব খোলার আড়ালে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের একাধিক তরুণ চিকিৎসক জানান, মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি হাসপাতালের কাজকর্মের উপরে নজর বাড়াতে যে কমিশন গড়বেন, তাদের আওতায় হাতে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া দরকার। অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে কিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। সব কিছু নিয়ে ‘নোট’ তৈরি করে নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে উত্তরকন্যার সূত্রটির দাবি।
বস্তুত, বুধবার দুপুরে টাউন হলে বৈঠকের পরেই উত্তরবঙ্গেও আলোড়ন পড়ে। উত্তরবঙ্গের নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠনের সভাপতি চিকিৎসক পীযূষ রায় বলেন, ‘‘সত্যিই হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় চিকিৎসার নামে যে ভাবে লক্ষ-লক্ষ টাকা আদায় হয়, তা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ এক ধাপ এগিয়ে শিলিগুড়ির সেবক রোডের বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার তথা প্রবীণ চিকিৎসক সুশান্ত রায় জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে রিসেপশনের পাশেই যত দ্রুত সম্ভব পৃথক ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রিসেপশন থেকেই রোগীর পরিবারকে সব সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, পুরোদস্তুর হেল্প ডেক্স হওয়াই তো ভাল। সেটাই করতে বলেছি।’’ শিলিগুড়ির পাকুড়তলা মোড়ের নার্সিংহোমের কর্ণধার তথা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জি বি দাসও পূর্ণাঙ্গ হেলপ ডেস্ক থাকলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে বলে সহমত। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও পৃথক ইনফরমেশন সেন্টার চালু করব।’’
তবে বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে নতুন কমিশন গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সতর্কতার কথাও শুনিয়েছেন উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবীণ চিকিৎসক কৃষ্ণচন্দ্র মিত্র। হাকিমপাড়ার নার্সিংহোমের পরিচালক তথা প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত। তবে, বেসরকারি নার্সিংহোমগুলি এখনও সরকারি নিয়ম মেনেই চলে। মর্জিমাফিক কিছু করতে পারে না। কিন্তু, সেই নিয়মটা সর্বত্র মানা হচ্ছে সেটা নিয়মিত সরকারি অফিসারদের দেখতে হবে।’’ সেই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবার ফারাকটা কমানোর কথাও সরকারকে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy