কাঁকসার রঘুনাথপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ও অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: বিকাশ মশান
‘কুকথায় পঞ্চমুখ’ অনুব্রত মণ্ডলকে (কেষ্ট) ‘শেষ বারের মতো’ সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লাগামছাড়া কথা বলার ব্যাপারে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতের জুড়ি মেলা ভার। বিরোধীদের শাসানি, তাঁদের প্রতি অশোভন উক্তি তিনি বহু বারই করেছেন। পুলিশকে ‘বোম মারুন’ বলতেও ছাড়েননি। বিস্তর সমালোচনা এবং ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নজরবন্দি থেকেও স্বভাব পাল্টায়নি তাঁর।
এ বার সেই কেষ্ট ধমক খেলেন খোদ তৃণমূল নেত্রীর কাছ থেকে। প্রকাশ্য জনসভা থেকেই।
মালদহের প্রৌঢ় আফরাজুল খানের খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে রবিবার মুরারইয়ের এক সভায় অনুব্রত বলেছিলেন, ‘‘রাজস্থানের মতো ঘটনা আমার জেলায় ঘটলে যত বড় বিজেপি লিডার হোক না কেন, আমি তাকে পুড়িয়ে মারতাম।’’
সোমবারই পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি কেষ্টকে আজ লাস্ট বারের মতো বলে দিচ্ছি, আর যেন বাজে কথা না বলে। অন্য কেউ বাজে কথা বললেও আমরা বলব না। আমার ভাষার অভাব নেই, আমার কাছে অনেক ভাষা আছে। আমি সেই ভাষায় কথা বলব। ভাষাই তো আমার গর্ব।’’ সে সময় মঞ্চেই ছিলেন অনুব্রত। তাঁকে ডান হাত তুলে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সায় দিতেও দেখা যায়।
নেতাকে ভর্ৎসনার পাশাপাশি বিজেপি যে ‘কুকথা’র রাজনীতি করছে, সেই খোঁচাও দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ওরা বাজে কথা বলছে বলে আমরা যেন কোনও বাজে কথা না বলি।’’
রাজনীতিতে অশোভন কথার ব্যবহার প্রায়ই হয়। কখনও তার জন্য বক্তা দুঃখপ্রকাশ করেন। কখনও কথার ভিড়েই সেগুলি হারিয়ে যায় বা দল সে সব আড়াল করার চেষ্টা করে। এর আগে অনুব্রতই যখন পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘ওর ব্রেনে অক্সিজেন কম যায়।’
মাসখানেক আগেও বোলপুরের শিবপুরে জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেষ্ট: “ক’টা বাজে? ৪.১৫ মিনিট। ৭টা পর্যন্ত সময় দিলাম। যারা আমাদের ছেলেদের মেরেছে, তাঁদের গ্রেফতার করুন। ৯টার মধ্যে আমি ঢুকে যাব। এক জনেরও বাড়ি-ঘর রাখব না। তাণ্ডবলীলা খেলে দেব।’’ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে মৃদু সমালোচনা করলেও জানিয়েছিলেন, অনুব্রত জনপ্রিয় নেতা।
আরও পড়ুন: বিজেপি ধর্ম দেখে, মানুষ নয়: মুখ্যমন্ত্রী
এ দিন মমতার ধমকের মধ্যে অবশ্য প্রশ্রয়ের বার্তা ছিল না। বরং অনেকের মতে ছিল স্পষ্ট একটি ইঙ্গিত। তা হল, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিজেপির থেকে তৃণমূল আলাদা এবং কুকথা বললে তা মেনে নেয় না। কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করায় রাহুল গাঁধীর নির্দেশে কংগ্রেস থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে মণিশঙ্কর আইয়ারকে। এ বার ত তদূর না হলেও প্রায় একই পথে হেঁটে কড়া বার্তা দিলেন মমতাও। পরে অনুব্রত বলেন, ‘‘উনি আমার অভিভাবক। উনি যা বলবেন, তেমনটাই হবে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য এ সব নিয়ে আদৌ বিচলিত নন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিজে থেকে কাউকে খারাপ কথা বলতে যাই না। তৃণমূল রোজ আমাদের মারে। মারের জবাবে কি রসগোল্লা ছুড়ব? যে ভাষা ওরা বোঝে, সেই ভাষাতেই বলি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy