নোট বাতিলের জেরে পিছিয়ে যেতে পারে রাজ্যের প্রস্তাবিত শিল্প সম্মেলন। অন্তত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তেমনই ইচ্ছে। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়েও দিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও জানুয়ারিতেই শিল্প সম্মেলন হবে বলে ঠিক হয়েছিল। এখন ফ্রেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের গোড়ায় বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৭ এর আয়োজনের কথা ভাবছে শিল্প দফতর। তবে সবটাই নির্ভর করছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উপর। এ বারের শিল্প সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি আসবেন বলে কথাও দিয়েছেন। এখন সম্মেলন পিছোতে গেলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রয়োজন।
নবান্নের খবর, রাষ্ট্রপতি ভবনে চিঠি পাঠিয়ে নতুন করে সময় চাওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে শিল্প সম্মেলনের নতুন দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। তবে তা না হলে নির্ধারিত ২০-২১ জানুয়ারিতেই সম্মেলন করতে হবে বলে শিল্প দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, নোট বাতিলের পরে চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান রাইসিনা হিলসের জানা। এক কর্তার কথায়, ‘‘তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপতির কাছে এর কুফল নিয়ে দরবার করে এসেছেন। ফলে মুখ্যমন্ত্রী যখন আর্থিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সম্মেলন পিছোতে চাইছেন, তখন রাষ্ট্রপতির থেকে নতুন দিনক্ষণ পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন নোট বাতিলের ফলে যে ভাবে দেশে ‘আর্থিক বিশৃঙ্খলা’র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শিল্প সম্মেলনের পক্ষে উপযুক্ত নয়। তাই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিল্প সম্মেলন স্থগিত রাখাই ভাল। কিন্তু শিল্প সম্মেলন সফল করার জন্য শিল্প উন্নয়ন নিগম এবং শিল্প দফতরের কর্তারা বছরভর পরিশ্রম করেছেন। বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার মন্ত্রী-সরকারি প্রতিনিধি, শিল্পপতিদের রাজ্যে আনার চেষ্টা চালিয়েছেন। এখন হঠাৎ সম্মেলন বাতিল হলে সব মাঠে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রীরে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, দেশের সার্বিক আর্থিক অবস্থা যখন করুণ, সাধারণ মানুষের দুর্দশা সীমাহীন, তখন ঘটা করে শিল্প সম্মেলনের মানেই হয় না। বরং পরিস্থিতি কিছুটা বদলালে মাস দেড়-দুই পরেই সম্মেলন করা ঠিক হবে। দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের সরকারের এই মনোভাব জানিয়ে দিলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেও মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।
শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের সম্মেলনে একাধিক দেশের মন্ত্রী-কর্তারও আসার কথা রয়েছে। যেমন চিনের ইউনান, সাংজি-র মতো তিন-চারটি প্রদেশের ভাইস-গর্ভনর, জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া প্রদেশের এক মন্ত্রী, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিওনের মেয়র, রাশিয়ার এক মন্ত্রী-সহ পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশের মন্ত্রী-কর্তাদের আসার কথা রয়েছে। ইতালির সরকারি প্রতিনিধি দল আনারও চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই একাধিক দেশে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তারা রোড-শো করে এসেছেন। প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু নোট বাতিলের ফলে সব হিসেব যে গোলমাল হতে চলেছে, তা জানিয়েছেন শিল্প দফতরের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এখন শিল্প আসার পরিস্থিতি নেই। যা আছে, তাই তো বন্ধ হতে চলেছে! ফলে এখন শিল্প সম্মেলন করার মানে হয় না।’’
নোট বাতিলের পরেও অবশ্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে শিল্প সম্মেলন হয়েছে। ওড়িশা তার অন্যতম। কর্নাটকের সম্মেলন হবে ফ্রেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। ২০-২২ জানুয়ারি হরিয়ানায় শিল্প সম্মেলন হবে। সবচেয়ে বড় মাপের রাজ্যভিত্তিক শিল্প সম্মেলন ‘ভাইব্রান্ট গুজরাত’ অবশ্য নির্দিষ্ট দিনেই হচ্ছে। নোট বাতিলের পরেও তার প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েনি। নতুন বছরের ৯-১৩ জানুয়ারি আমদাবাদে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠক করবেন বিশ্বসেরা ৫০ জন সিইও-র সঙ্গে। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘ওখান থেকে শুরু নয়, শেষের শুরু হবে’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy