Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় গিয়েও উদ্বোধনে রাজি হলেন না মমতা

পিতৃপক্ষ চলছে। দেবীপক্ষ শুরু হতে আরও দু’দিন। কিন্তু বুধবারই দুর্গাপুজোর মণ্ডপে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর উদ্বোধনে বরাবরই তিনি যথেষ্ট উৎসাহী। অতীতে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় কখনও-সখনও পুজো উদ্বোধনে গিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

পিতৃপক্ষ চলছে। দেবীপক্ষ শুরু হতে আরও দু’দিন। কিন্তু বুধবারই দুর্গাপুজোর মণ্ডপে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পুজোর উদ্বোধনে বরাবরই তিনি যথেষ্ট উৎসাহী। অতীতে মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় কখনও-সখনও পুজো উদ্বোধনে গিয়েছেন। তাঁর পরে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরের বাম জমানায় জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পুজোমণ্ডপের ধারেকাছে দেখা যায়নি। দেখার প্রশ্নও ছিল না। মমতা ক্ষমতায় আসার পরে আবার পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার উন্মাদনা শুরু। তিনিও সানন্দে মণ্ডপ ঘোরেন। দুর্গা-কালী-জগদ্ধাত্রী সব পুজোতেই অনেক মণ্ডপে তাঁকে দেখা যায়। দুর্গাপুজোয় উদ্বোধনের চাপ তাঁর এত বেশি থাকে যে গত বছর থেকে তিনি কাজটি শুরু করে দিচ্ছেন মহালয়ার দিন থেকেই। কিন্তু এ বার তো মহালয়াও এল না, তার আগেই উদ্বোধন? শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তার উত্তর দিলেন: ‘‘দেবীপক্ষ এখনও শুরু হয়নি। পিতৃপক্ষ চলছে। আমি এ সব মেনে চলি। তাই আজ উদ্বোধন নয়, এখানে এসে শুধু পুজোর আনন্দ নিলাম। সকলকে শারদ শুভেচ্ছা জানাই।’’ মূল মণ্ডপেও এ দিন ঢোকেননি তিনি।

শাস্ত্রজ্ঞেরা অবশ্য এখনই মণ্ডপে ঢোকা বা পুজো উদ্বোধনের মধ্যে ‘অনিয়ম’ কিছু দেখেন না। কারণ তাঁদের মতে, দেবীর কৃষ্ণা নবম্যাদি কল্পারম্ভ শুরু হয়ে গিয়েছে গত শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। এর সঙ্গে পিতৃপক্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই যাঁরা এই ‘কল্প’ মেনে পুজো করেন, তেমন বহু পরিবারে দেবীর বোধনও হয়ে গিয়েছে। পণ্ডিত সতীনাথ পঞ্চতীর্থ বুধবার বলেন, ‘‘দুর্গাপূজার সাতটি কল্প— কৃষ্ণা নবম্যাদি, প্রতিপদাদি, ষষ্ঠ্যাদি, সপ্তম্যাদি, অষ্টম্যাদি, কেবলাষ্টমী, কেবল নবমী। যিনি যে ভাবে চান যে কোনও একটি কল্প অনুসরণ করতে পারেন। তাই আজ কেউ যদি কোনও পুজোমণ্ডপ উদ্বোধনও করেন, তাতে শাস্ত্র মতে কোনও বিধিভঙ্গ হয় বলে মনে করি না।’’

শ্রীভূমির পুজোর কর্ণধার মমতার দলের বিধায়ক সুজিত বসু। বিধাননগরের রাজনীতিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের টানাপড়েনে তিনি এক বড় চরিত্র। এই প্রথম তাঁর পুজোয় পা রাখলেন মমতা। তিনি যে যাবেন, সেই ঘোষণা বেশ কিছু দিন আগে করে দিয়েছিলেন মমতা স্বয়ং। জল্পনাও শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। পুজোর আয়োজন দেখে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘খুবই ব্যয়বহুল পুজো। এখানে মা-কে অনেক গয়নাগাটি দিয়ে সাজানো হয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে সুজিত বলেন, ‘‘যখন দল (সিপিএম) ছেড়েছিলাম, তখন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন একমাত্র মমতাদি। তিনি আমার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিয়েছেন। না হলে আমাকে খুঁজে পাওয়া যেত না।’’

এ দিন বিকেল পৌনে ছ’টায় শ্রীভূমি বাসস্টপে এসে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গাড়ি থেকে নামতেই উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নেওয়া হয় তাঁকে। বেজে ওঠে ঢাক, ধামসা-মাদল। লোকশিল্পীরা নাচ ও গানের মধ্য দিয়ে অভিবাদন জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুজো ঘিরে হাজার হাজার ব্যবসা চলে। সরকার করে না, কিন্তু ব্যবসা হচ্ছে। বাঁশ, বেত, শঙ্খ, চালের গুঁড়ো— এত শিল্পী। এটাই তো ক্ষুদ্র শিল্প।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত, বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE