মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক বাম আমলের সুদ মকুবের জন্য যতবারই কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন, প্রতিবারই শুনেছেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশের জন্য অপেক্ষা করুন। আশা ছিল, সেই সুপারিশ আলো দেখাবে। ক’দিন আগেই চতুর্দশ অর্থ কমিশন তাদের সুপারিশে রাজ্যের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করার কথা বলেছে। একই সঙ্গে রাজস্ব ঘাটতি নির্মূল করতে দু’বছরে পশ্চিমবঙ্গকে ১১,৭৬০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথাও বলেছে কেন্দ্র। কিন্তু সুদ মকুবের কথা কোথাও বলা নেই। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে নিজের ক্ষোভ গোপন করছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অসন্তোষের কথা জানাতেই যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে যাচ্ছেন, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশের দিকে কার্যত হা পিত্যেশ করে তাকিয়ে ছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আগের সরকারের ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ ও তার সুদের উপর স্থগিতাদেশ (মোরাটোরিয়াম) জারি করুক কেন্দ্র। এর পাশাপাশি রাজ্যে সংগৃহীত কেন্দ্রীয় করের ৫৪ শতাংশ ফেরতের দাবিও করেছিল রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্র তা না করায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। এ বার সেই আক্রমণকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন মমতা। এ দিন রাজ্য বাজেট পেশের পরে বিধানসভায় বাইরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা (কেন্দ্র) রাজ্যের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ করে ১৬-১৭টি প্রকল্পের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে! এ ছাড়া প্রতি মাসে বিপুল টাকা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোনও রাজ্য থেকে এ ভাবে টাকা কেটে নিয়ে যাওয়া হয় না।”
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ক্ষমতায় আসার পর থেকে বারবার এই বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করে এই দাবি করেছিলাম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও এই নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও কথা বলেছেন। সবাই বারবারই আমাদের অর্থ কমিশনের সুপারিশের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সহায়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্র মেনে নেওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক সুবিধা হবে। এই পথেই রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি মিটতে পারে বলেও অর্থমন্ত্রীর দাবি। জেটলি বলেন, “রাজ্যের পুরনো ঋণের যে সমস্যা ছিল, তা থাকবে। যদিও আমরা স্বীকার করছি, বাম আমলে ঋণের বোঝার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখন যা ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার ফলে দু’বছর পর পশ্চিমবঙ্গের আর রাজস্ব ঘাটতি থাকবে না। বরং উদ্বৃত্তই হতে পারে।” সম্ভবত ১০ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেটলি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। তিনি সম্ভবত দশ তারিখে দিল্লি আসছেন। তখন এই বিষয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে।” ঘটনাচক্রে এ দিন সংসদেও বক্তব্য রাখার সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, “অর্থ কমিশনের সুপারিশ নিয়ে অনেকের অনেক মত ছিল। আমরা চাইলে সেই মতপার্থক্যকে সামনে তুলে ধরে রাজ্যকে সুবিধা না-ও দিতে পারতাম। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার পর কার্যত ৬২ শতাংশ এখন রাজ্যগুলির হাতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম মেনে আমরা দিল্লিকে কম ও রাজ্যকে বেশি সুবিধা দিতে চেয়েছি।”
এই পরিপ্রক্ষিতেই দীর্ঘ ন’মাসের জড়তা ভেঙে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। যদিও এর মধ্যেই একটি মহল থেকে বলা হচ্ছে, সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় মমতা আগের অবস্থান বদলে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। মমতার এই অবস্থান বদল নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন।
তবে কি মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে দু’দলের রাজনৈতিক অবস্থানের কোনও হেরফের হতে পারে?
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এ দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, “মমতা একবার কেন, একশো বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কিন্তু তাই বলে আমরা দলের রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন করব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy