অভিভাবক: অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী সাহানারা ও তাঁর মা আদুরি বিবির সঙ্গে পড়শি স্বপন মোদক। শুক্রবার হাইকোর্ট চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ।
পলাশির মাঠ ঘেঁষা অজ গাঁয়ের ‘স্বপনকাকু’ই চোখ খুলে দিয়েছেন আদুরি বিবির। অ্যাসিড-হানায় চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ওই মহিলার একমাত্র মেয়ে সাহানারার।
আট বছর আগেকার সেই অ্যাসিড-হামলার প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের কানাকড়িও জোটেনি এত দিনে। সরকারের ঘুম ভাঙাতে পড়শি স্বপন মোদকের পরামর্শেই কলকাতা হাইকোর্টে হাজির সকন্যা আদুরি। শুক্রবার সাতসকালে পলাশির মুলুকঘেঁষা ছোটকুলবেড়িয়া গ্রাম থেকে উজিয়ে হাইকোর্ট-চত্বরে হাজির দুই গ্রামীণ মহিলা আর পড়শি প্রৌঢ়।
গ্রামের ১১০০ ঘরের মধ্যে স্বপনবাবুরাই একমাত্র হিন্দু পরিবার। থাকেন গ্রামের মাঝখানে। দেশভাগের সময়ে কৃষ্ণনগর ও বহরমপুরের মাঝখানের গ্রামটি ভারত না পাকিস্তান কোথায় পড়বে, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। তখন এক বার গ্রাম ছাড়ার কথা ভেবেছিল মোদক পরিবার। সেটি হতে দেননি মুসলিম পড়শিরাই। বাইরের কোনও ঘটনার আঁচ আর লাগেনি গ্রামের পরিবেশে। এখনও মোদকদের ঘরের কালীপুজো, বিয়েপার্বণে মেতে ওঠে গোটা গাঁ। ছেলেমেয়েরা ছোট থাকতে ইদে ওদের নতুন জামা দিতেন স্বপনবাবু। গ্রামে কারও
বিয়ের দিন ঠিক করতে হলে পড়শিরা দ্বারস্থ হন গ্রিল কারখানার মালিক, এই মুরুব্বি মানুষটির।
আরও পড়ুন:তৃতীয় দফায় গর্ভবতী, আশ্রয় জুটল ভবঘুরের
আদুরি বিবি ও জনমজুর মসিতুল্লা শেখের মেয়েকে জন্মাতে দেখেছেন স্বপনবাবু। সামান্য কয়েক কাঠা জমি নিয়ে পারিবারিক কোন্দলই কাল হল। অভিযোগ, জমির দখল না-পেয়ে আত্মীয় সাত্তার আলি শেখ, নাসিরুদ্দিন, বশিরুদ্দিনেরা হুমকি দেয়, ‘তোদের মেয়েটার মুখ পুড়িয়ে দেব। জীবনভর ভিক্ষে করবে!’ সাহানারার তখন সবে বিয়ে ঠিক হয়েছে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের এক রাতে ঘরে ঢুকে মেয়েটার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। দোষীরা সাজা খাটছে। কিন্তু বেচারি মেয়েটিকে কি সত্যিই ভিক্ষে করতে হবে? মা-বাপ না-থাকলে কী হবে ওর— ভাবতে ভাবতে প্রতিকারের উপায় বার করেছেন স্বপনবাবুই।
‘‘কাগজেই দেখি, অ্যাসিড-হামলায় অন্তত তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। শুনলাম, হাইকোর্টে আবেদন জানালে সুরাহা হলেও হতে পারে,’’ বললেন স্বপনবাবু। রাস্তা চিনে এসে উকিল জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ফোন নম্বরও খুঁজে বার করেন ওই প্রৌঢ়ই। জয়ন্তবাবু ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় একটি পয়সা না-নিয়ে সাহানারার জন্য মামলা লড়ছেন। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় বলছে, মেয়েটির চিকিৎসা, ভবিষ্যতের কথা প্রশাসনকেই ভাবতে হবে।’’ মামলাটি শীঘ্রই হাইকোর্টে উঠবে। আদুরির আশা, এ বার নিশ্চয়ই ভাল কিছু হবে। উকিলবাবুর সহৃদয়তা আর ‘স্বপনকাকু’র ভরসায় মেয়েকে নিয়ে আবার কলকাতা আসতে তৈরি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy