ধর্মবদল: মুসলিম থেকে হিন্দু হওয়ার পরে হুসেন আলির পরিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
এক মাস আগে সপরিবার এসেছেন কলকাতায়। এখনও জোটেনি স্থায়ী ঠিকানা। থাকতে হচ্ছে আত্মগোপন করে। কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসে না, বলছেন শিলচরের হুসেন আলি। গত ১৪ তারিখ ধর্মতলায় হিন্দু সংহতির সভায় পরিবারের আরও বারো জনের সঙ্গে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন যিনি।
শনিবার কলকাতার এন্টালি এলাকার একটি আস্তানায় হাজির হয়েছিলেন হুসেন। কথাবার্তায় শিলেটি ভাষার ছাপ স্পষ্ট। তিনিও স্পষ্টই জানালেন, কারও কোনও প্রলোভন কিংবা আশ্বাস নয়। নিজেদের ইচ্ছাতেই ছেড়েছেন জন্মভূমি শিলচর। হুসেনের কথায়, ‘‘যেখানে আমাদের কেউ ন্যূনতম সম্মান দেয় না, সেখানে আর ফিরে কী করব? তার থেকে বরং হিন্দু হয়ে কলকাতাকেই আপন করে নেব। আর এখানেও ঠাঁই না মিললে পাড়ি দেব হয় বিহার, না হয় দিল্লি।’’
গত বুধবার ধর্ম বদলের পরে সাংবাদিকেরা হুসেনদের পরিচয় জানতে যেতেই বাধা দেন হিন্দু সংহতির সদস্যরা। রীতিমতো মারধর করেন সাংবাদিকদের। সংগঠনের সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘সে দিন একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ওঁদের এখনও আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে। সভার দিন ওঁরা কোনও ভাবে ঠিকানা বলে ফেললে সমস্যা হতো। পরে এক দিন ওঁদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করার পরিকল্পনা ছিলই।’’
হুসেন এ দিন জানান, শিলচরের বাগা বাজার এলাকায় তাঁর বাড়ি। ১৯৯৩ সালে বদরপুরের বাসিন্দা সন্ধ্যারানি দত্তকে ভালবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সন্ধ্যার নাম হয় ময়না বিবি। তিনি বলেন, ‘‘আমি
হিন্দু ঘরের মেয়ে হওয়ায় নানা সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছিল।
এক সময় তো গোটা পরিবার কার্যত এক ঘরে হয়ে পড়ি। সাত বছর আগে বড় ছেলেটা হারিয়ে যায়। আমি হিন্দু বলে কেউ খুঁজে দিতে সাহায্য করেননি। একটা মেয়ের বিয়ে হলেও আমি হিন্দু বলে জামাই ছেড়ে দিয়েছে।’’
হুসেনের দাবি, হিন্দু হওয়ার সিদ্ধান্তের সলতে পাকানো শুরু করেছিলেন দু’বছর আগে। শেষে শিলচরে হিন্দু সংহতির এক সদস্যের খোঁজ পান। গত ডিসেম্বরে তাঁকে চিঠি লিখে ধর্ম পরিবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সংগঠনের প্রধান কার্যালয় থেকে সবুজ সঙ্কেত মিলতেই জানুয়ারির মাঝামাঝি মাত্র ৪৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এক প্রতিবেশীর হাতে ঘরের চাবি তুলে দিয়ে উঠে বসেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে।
দেবতনু জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আইনগত ভাবে নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করেছেন হুসেনরা। ময়না এ দিন বলেন, ‘‘একটা গীতা কিনেছি। রোজ সেটা পড়ে বাড়ির সবাইকে শোনাই। সব ঠিক হয়ে গেলে মা কালীর মন্দিরে যাব।’’ কিন্তু অচেনা শহরে অন্ন সংস্থান হবে কী ভাবে? গ্রামে ভাগ চাষির কাজ করা হুসেনের দাবি, ‘‘সব করতে পারি। রিকশা, অটো চালাব। প্রয়োজনে পেয়ারা বিক্রি করব। ময়নাও লোকের বাড়ি কাজ করবে। কিন্তু হিন্দু হবই।’’
কিন্তু কত দিন চলবে আত্মগোপন? হুসেনের কথায়, ‘‘আকাশ এক দিন শান্ত হবে, রোদ তো উঠবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy