বঙ্গের সিপিএম নেতাদের কাছে যা ইদানীং অভাবনীয়, বাংলায় এসে তা-ই করে গেলেন মানিক সরকার! রাজ্যে বিধানসভা ভোট মিটে যাওয়ার পরে প্রথম বার দলীয় কর্মসূচিতে এসে বিজেপি এবং তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেসকেও নিশানা করলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। আর্থিক নীতি, শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি মোকাবিলা— কংগ্রেসকে ছাড় দিতে চাননি মানিকবাবু।
তাঁর নিজের রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূলের উত্থান ঘটলেও বামেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখনও কংগ্রেস। নিজের তালুকে স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পরে বামেদের বিপর্যয় নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় স্তরে বিতর্ক চলাকালীন আগরতলাতেই একটি অনুষ্ঠানে মানিকবাবু বলে ফেলেছিলেন, এক বার বিজেপি বা এক বার কংগ্রেসকে সমর্থন করতে গিয়ে বামেদের অবস্থা হচ্ছে ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো! তাঁর ওই মন্তব্যে বিতর্কও বেধেছিল। এ বার গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের সমাবেশে এসে মানিকবাবু প্রকাশ্যেই কংগ্রেসের সমালোচনা করেছেন। ঘটনাচক্রে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেখা গোস্বামী তার আগেই বক্তৃতা করলেও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের সময়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। মানিকবাবুর কংগ্রেস-সমালোচনা মঞ্চে বসে শুনতে হয়নি এ রাজ্যের প্রথম সারির কোনও সিপিএম নেতা-নেত্রীকে!
বিধাননগরে শুক্রবার মহিলা সমিতির সমাবেশে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি-র সরকার আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়েছে! গরিব, শ্রমজীবী মানুষের জন্য, বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য এই সরকার কী করেছে? আগের যে সরকার ১০ বছর ছিল (ইউপিএ), তারাও এই বিষয়ে কিছু করেনি। এই অংশের মানুষের জন্য আন্দোলন বামপন্থীদেরই করতে হবে। সেটা এক দিন, দু’দিনের ব্যাপার নয়।’’ কংগ্রেসের মতো দলকে দিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সুদিন আনার সংগ্রামের স্বপ্ন যে চলে না, তা-ও বলতে ভোলেননি মানিকবাবু। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী নিহত হওয়ার পরে দিল্লি-সহ দেশের নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনায় কংগ্রেসের ভূমিকার কথাও টেনে এনেছেন। বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সরকারই তখন কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিল।
সাধারণ মানুষের আসল সমস্যা ছেড়ে, কর্মসংস্থানের সুরাহা না করে এ রাজ্যে তৃণমূলের সরকার যে উৎসবে মেতে আছে, সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন মানিকবাবু। তৃণমূল সরকারের সমালোচনা শোনা গিয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য বৃন্দা কারাটের গলায়। তবে খিদিরপুরে এ দিন মহিলা সমিতির কলকাতা জেলা সম্মেলনের সমাবেশ-মঞ্চে বৃন্দা অন্তত কংগ্রেস-বিরোধিতার পথে হাঁটেননি। মানিকবাবুর মতোই তাঁরও অভিযোগ, মেরুকরণের রাজনীতির জেরে উৎসবের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যে উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আগে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy