Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অনুমোদন ছাড়া ওষুধে বাজার ভরা

কলকাতার দুই বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য এবং আলোকগোপাল ঘোষাল ওই ইনহেলার কয়েক জন রোগীকে দিয়েছিলেন। দু’জনেই সত্যিটা জেনে স্তম্ভিত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

চূড়ান্ত অস্বস্তি আর শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন কলকাতার দুই নামী বক্ষরোগ চিকিৎসক। এক মাস আগেও তাঁরা শ্বাসকষ্টের রোগীকে যে ওষুধ দিয়েছিলেন, আচমকা জানতে পেরেছেন, তা আদতে ‘ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ (ডিসিজিআই)-র ছাড়পত্র পায়নি! ওই চিকিৎসকদের অভিযোগ, নামী ওষুধ সংস্থার মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা এসে তাঁদের সেই ওষুধের গুণাগুণ বুঝিয়েছেন। জানিয়েছেন, ওই ওষুধ সব বড় দোকানে মিলছে। কিন্তু সেগুলি যে ডিসিজিআই-এর ছাড়পত্র পায়নি, তা বেমালুম চেপে গিয়েছেন।

দিল্লিতে সম্প্রতি ডিসিজিআই-এর সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি-র বৈঠকে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদনহীন ওষুধ বাজারে আসার প্রসঙ্গটি তোলেন রাজস্থানের মেডিসিন-চিকিৎসক অভিষেক অগ্রবাল। শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, নামী সংস্থার এমন একটি ইনহেলার তিনি সঙ্গে এনেছিলেন। কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি না-মেলা সত্ত্বেও ওই ইনহেলার দেদার বিকোচ্ছে। ডাক্তারবাবুরা লিখছেনও। অভিষেকবাবুর কথায়, ‘‘শুধু ওই ইনহেলার নয়, বহু নামী সংস্থার বহু ধরনের ওষুধ এ ভাবে অনুমতি ছাড়া বাজার ছেয়ে ফেলেছে। আমরা কেন্দ্রকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি।’’

কলকাতার দুই বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য এবং আলোকগোপাল ঘোষাল ওই ইনহেলার কয়েক জন রোগীকে দিয়েছিলেন। দু’জনেই সত্যিটা জেনে স্তম্ভিত। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, কেন তাঁদের কাছে সত্য গোপন করা হল?

পার্থসারথিবাবুর কথায়, ‘‘কোন কোন ওষুধ অনুমতি পেয়েছে বা কোনটা পায়নি, তা তো ডাক্তারদের পক্ষে হিসেব রাখা সম্ভব নয়। ডিসিজিআই-এর তরফে তা ডাক্তারদের নিয়মিত জানানোরও কোনও পরিকাঠামো নেই। যখন একটা ওষুধ দোকানে পাওয়া যায়, তখন চিকিৎসকেরা ধরে নেন, তাকে ডিসিজিআই অনুমতি দিয়েছে।’’

আলোকগোপালবাবুও বলেন, ‘‘অদ্ভুত নিয়ম চলছে। বিভিন্ন রোগের এমন বহু ওষুধ রয়েছে, যেগুলি বাজারে আনার অনুমতি ডিসিজিআই দেয়নি, অথচ কয়েকটি রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া সেগুলি তৈরি ও বিক্রির লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। ফলে ওষুধটি আদৌ ঠিক কি না, বা সেটি ব্যবহারে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে কি না, বা কোন ডোজে ওষুধটি খাওয়া উচিত, তা জেনে নেওয়া হচ্ছে না। তার আগেই ওই সব রাজ্যে তৈরির পরে সেই ওষুধ বাকি রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।’’

মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তারা যে ওষুধের প্রচারের নির্দেশ দেন, তাঁরা তা পালন করেন মাত্র। তার অনুমতি আছে কি না, তা তাঁদের জানার কথা নয়। একই মত, ওষুধ বিক্রেতা ও বণ্টনকারীদের সংগঠন ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর শঙ্খ রায়চৌধুরীর।

প্রশ্ন, ডিসিজিআই কেন সব জেনেও নীরব? কেন তাঁরা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে না? কেন তাদের অনুমতি না নিয়েই উত্তরাখণ্ড, পণ্ডিচেরি, হিমাচলপ্রদেশের মতো কিছু রাজ্য অনেক ওষুধকে তৈরি ও বিক্রির ছাড়পত্র দিয়ে দিচ্ছে? রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও বা কেন অভিযান চালিয়ে ওই ওষুধগুলি আটকাচ্ছে না?

কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা জানান, সমস্যাটা আইনি। বেআইনি ভাবে ওষুধের অনুমতি দেওয়া ও তার বাজারে আসা আটকাতে ডিসিজিআই একাধিক মামলা করেছিল। সব ঝুলে আছে। এর সুযোগ নিয়ে অনুমতিহীন ওষুধ রয়ে যাচ্ছে। রোগী যে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন, তার কার্যকারিতা বা গুণাগুণ আদৌ পরীক্ষিত কি না, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medicines Illegal market ওষুধ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE