Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

জীবন দিয়ে উর্দিকে কুর্নিশ অমিতাভের

কী আশ্চর্য সমাপতন! দুষ্কৃতীদের গুলি যখন অমিতাভ মালিকের মাথা ফুঁড়ে দিল, তখনও তিনি সেই উর্দিতেই! তবে চেনা খাঁকি রং ভিজে গিয়েছে নৃশংস রক্তের দাগে।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৬
Share: Save:

উর্দিকে বড় ভালবাসতেন তিনি। সেই উর্দির জন্যই তাঁর পুলিশের চাকরিতে আসা। আর কী আশ্চর্য সমাপতন! দুষ্কৃতীদের গুলি যখন অমিতাভ মালিকের মাথা ফুঁড়ে দিল, তখনও তিনি সেই উর্দিতেই! তবে চেনা খাঁকি রং ভিজে গিয়েছে নৃশংস রক্তের দাগে।

শনিবার মধ্যমগ্রামের বাড়িতে পৌঁছে যান অমিতাভের ব্যাচের ৫২ জনই। তাঁদের কথায় বারবার ঘুরেফিরে এল নিহত তরুণ পুলিশ আধিকারিকের উর্দি-প্রীতি। অমিতাভ সহকর্মীদের প্রায়ই বলতেন, ‘‘উর্দির অনেক ওজন রে। চাইলে আমরা অনেক ভাল কাজ করতে পারি। ভাল কাজ করলে না করলে মানুষ সম্মান করবে কেন?’’

বছরখানেকের প্রশিক্ষণ শেষে উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি থানাতে কাজ করেন অমিতাভ। তার পরে দার্জিলিংয়ে পোস্টিং। পাহাড় শুনেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর বাড়ির লোকেরা। কিন্তু অমিতাভ নিজে খুশি হয়েছিলেন। বিয়ে না হলেও বিউটির সঙ্গে সম্পর্ক তখন থেকেই। অমিতাভকে উৎসাহ দেন তিনিই। কলকাতার একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় চাকরি করতেন বিউটি। কিন্তু স্বামী যেখানে পাহাড়ে, বিউটি কী করে কলকাতায় নিশ্চিন্তে চাকরি করবেন! চাকরি ছেড়ে পাড়ি দিলেন পাহাড়ে।

চাকরির শুরুতেই সিংমারি ফাঁড়িতে দেড় বছর কাজ করেছেন তিনি। পাতলেবাস-সহ লাগোয়া এলাকা চিনতেন হাতের তেলোর মতো। পাতলেবাস মানে যে বিমল গুরুঙ্গের খাসতালুক, গত ক’মাসে তা জেনে গিয়েছে তামাম রাজ্য।

মাস কয়েক আগে সিংমারি থেকে দার্জিলিং সদর থানায় পোস্টিং হলেও সিংমারি-পাতলেবাসে কোনও ‘অপারেশন’ হলে নেতৃত্ব দিতেন অমিতাভ। শুক্রবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বি-টেক করার পরে কেন পুলিশের চাকরি? এই প্রশ্ন বারবার করেছেন অমিতাভের সহকর্মীরা। আর তত বারই বছর সাতাশের যুবক শুনিয়েছেন তাঁর উর্দি-প্রেমের কথা।

অমিতাভের এক সহকর্মী বলেন, ‘‘আমাদের ব্যাচে যত অফিসার, এই অল্প সময়ের মধ্যে এত এনডিপিএস (মাদক আইন) কেস কেউ করতে পারেনি।’’ দার্জিলিংয়ে কর্মরত তাঁর আর এক সহকর্মী জানাচ্ছেন, পুলিশের চাকরির প্রাথমিক শর্ত জিডি (‌জেনারেল ডায়েরি) আর সিডি (‌কেস ডায়েরি)। এক সঙ্গে দু’টো তৈরি করা পুলিশের কাছে যথেষ্ট ঝক্কির। কিন্তু, অমিতাভ অনায়াসে জিডি এবং সিডি দু’টো একসঙ্গেই করতে পারতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন দু’য়েক আগে পাতলেবাসে একটি গাড়ি সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করছিল। ‘সোর্স’ মারফত সেই খবর পেয়েছিলেন অমিতাভ। তার পরেই অপারেশনের ছক কষা হয়। দিন চারেক আগেই উচ্ছ্বসিত হয়ে এক সহকর্মীকে অমিতাভ ফোন করেছিলেন, ‘‘বিমলের খোঁজ পেয়ে গিয়েছি রে। যে কোনও দিন তুলব।’’

কান্নাভেজা গলায় সেই সহকর্মী বলছেন, ‘‘শুক্রবার রাতেই হয়তো তেমন কিছু ঘটতে পারত। কিন্তু, অমিতাভ নিজেই যে চিরঘুমের দেশে চলে যাবে, কে জানত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amitabha Malik অমিতাভ মালিক
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE