Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তালাক-রায় নিয়েই প্রশ্ন সিদ্দিকুল্লাদের

সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বক্তব্য, তালাকের অধিকার হাদিসে স্বীকৃত। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৭ সাল থেকে সেই অধিকারকে মান্যতা দেওয়া শুরু করেছিল। যে ঐতিহ্য বজায় ছিল এত দিন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ ভাবে তাঁদের ধর্মীয় কর্তব্য স্থির করে দিতে পারে কি না, প্রশ্ন তুলছেন তিনি।

উদ্যাপন: তিন তালাক বাতিলের খবরে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। দলীয় দফতরে মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্যাপন: তিন তালাক বাতিলের খবরে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। দলীয় দফতরে মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

‘তড়িঘড়ি তালাক’ রুখতে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু ধর্মীয় বিধানে এ ভাবে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে মুসলিমদের সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরে করণীয় ঠিক করতে আজ, বুধবারই মহাজাতি সদনে জরুরি বৈঠকে বসছে জমিয়তের রাজ্য কমিটি।

সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বক্তব্য, তালাকের অধিকার হাদিসে স্বীকৃত। ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৭ সাল থেকে সেই অধিকারকে মান্যতা দেওয়া শুরু করেছিল। যে ঐতিহ্য বজায় ছিল এত দিন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ ভাবে তাঁদের ধর্মীয় কর্তব্য স্থির করে দিতে পারে কি না, প্রশ্ন তুলছেন তিনি। ঘটনাচক্রে, সিদ্দিকুল্লা এখন তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত বিধায়ক এবং রাজ্যের মন্ত্রী। সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলা দায়ের হওয়ার পরে কলকাতায় জমিয়তের আয়োজিত সমাবেশ থেকেই তিন তালাকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন রাজ্যের কয়েক জন শীর্ষ মন্ত্রী।

আরও পড়ুন: আক্ষেপ, এমন রায় কেন আগেই হলো না!

সিদ্দিকুল্লার দাবি, সর্বোচ্চ আদালত বিবাহবিচ্ছেদের যে প্রথা নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছে, তা আসলে ‘তালাক-এ-বিদ্দত’। কিন্তু শরিয়তি বিধান মেনে ‘তালাক-এ-হাসান’ মুসলিম সমাজে স্বীকৃত এবং তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। সিদ্দিকুল্লা এ দিন বলেন, ‘‘মুসলিমরা তাঁদের ধর্মীয় রীতি মেনে কী করবেন, সেটা তাঁরা ঠিক করে দিতে পারেন কি না, বিনীত ভাবে এটা মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রশ্ন। আদালত বরং চাইলে নির্দেশ দিতে পারত যে, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বা দেওবন্দের দারুল উলুম তালাক-ই-বিদ্দতের বিরুদ্ধে প্রচার চালাবে যাতে কেউ ওই পথে না যান।’’ সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের মধ্যে থেকেই তিন তালাক নিয়ে তিন রকম মত উঠে এসেছে বলে গ্রন্থাগারমন্ত্রীর দাবি। সেই সূত্রেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এর পরে কি সাংবিধানিক বেঞ্চের উপরে আস্থা বাড়বে?’’

তা হলে তাঁরা কি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে নামবেন? সিদ্দিকুল্লার জবাব, ‘‘আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে রাজ্য কমিটির বৈঠক হবে। তবে সব মানুষের কাছে আবেদন করছি, অশান্তি ছড়াতে পারে, এমন কোনও কাজ কেউ করবেন না। প্ররোচনা ছড়াবেন না।’’

জমিয়তের ভিন্ন সুর হলেও রাজ্যের প্রায় সব দলই সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে ভিন্ন মেরুতে হলেও তিন তালাকের বিরোধিতায় সরব হয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমি এই রায়কে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। এই রায় আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং প্রগতিকে সাহায্য করবে।’’ তবে বিচারপতিদের মধ্যে যে হেতু মতভেদ ছিল, তাই রায়ের আরও বিশদ পর্যালোচনা করার কথা বলেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। বিজেপির বক্তব্য, এ বার তারা সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে গ্রামে গ্রামে প্রচারে নামবে। দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে, মুখে মুখে তালাক আর দেওয়া যাবে না।’’ দেশ নতুন আলোর পথে দৃপ্ত পদক্ষেপ করল বলে মন্তব্য করেছেন পিডিএস নেত্রী অনুরাধা পূততুণ্ডও। আনুষ্ঠানিক ভাবে নীরব শুধু তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE