বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বন্ড সই করিয়ে সরকারি চাকরিতে ধরে রাখা এবং গ্রামে পরিষেবা দিতে বাধ্য থাকার কথা জানিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার, শুক্রবার আদালতে তা বড় ধাক্কা খেল।
২০১৪ সালে এমডিএমএস এবং পিজি ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাতে বলা হয়েছিল, এমডিএমএস এবং পিজি ডিপ্লোমাধারীদের যথাক্রমে তিন ও দু’বছর বাধ্যতামূলক ভাবে প্রধানত জেলায় সরকারি হাসপাতালে নিযুক্ত থাকতে হবে। এ জন্য এমডিএমএস ডিগ্রিধারীদের ৩০ লক্ষ এবং পিজি ডিপ্লোমাধারীদের ২০ লক্ষ টাকার বন্ড সইও করিয়ে নেওয়া হয়। এর অর্থ, কোনও চিকিৎসক নির্দেশ মেনে সরকারি হাসপাতালে কাজ করতে না চাইলে তিনি বন্ডের টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন। এর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে ১৩৯ জন চিকিৎসক হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। সেই মামলার রায় গিয়েছে ডাক্তারদের পক্ষে।
আবেদনকারী চিকিৎসকদের আইনজীবী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, এক বছর ধরে শুনানি চলার পরে গত অগস্ট মাসে শুনানি শেষ হয়। রায় দান মুলতুবি রাখেন হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার বিচারপতি রায় দিয়ে জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ওই বিজ্ঞপ্তি খারিজ করা হচ্ছে। আইনজীবী জানান, বিচারপতি একই সঙ্গে বলেছেন, এখন থেকে ডিগ্রিধারীদের এক বছর কোনও সরকারি হাসপাতালে কাজ করলেই চলবে। কোনও চিকিৎসক তাতে রাজি না হলে সরকারকে বন্ডের টাকা বা ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তবে একসঙ্গে ওই টাকা দিতে হবে না। বছরে দু’লক্ষ করে পাঁচ বছরে ওই টাকা মেটাতে পারবেন তিনি।
এত দিন নিয়ম ছিল, বন্ডের সময়সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের যাবতীয় মার্কশিট সরকারের কাছে জমা রাখা থাকবে। তিনি চাকরি ছাড়তে চাইলে বন্ডের টাকা না-মেটা পর্যন্ত মার্কশিট ফেরত দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, বন্ডের টাকার প্রথম কিস্তি বাবদ দু’লক্ষ টাকা জমা দিলেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের মার্কশিট ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে সরকার।
প্রসঙ্গত, সরকারি হাসপাতালে ডিগ্রিধারীদের এক বছর কাজ করার নিয়ম ২০১৩ সাল থেকে চালু ছিল রাজ্যে। আদালত সেটাই বজায় রাখতে বলেছে। হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় এ দিন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদারের সওয়াল ছিল, চিকিৎসকদের বন্ড সই করতে বাধ্য করেনি রাজ্য। তা ছাড়া, রাজ্যে চিকিৎসকদের অভাব রয়েছে। রাজ্যের খরচেই তাঁরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করার চিন্তাভাবনা করছে স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy