Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার অমিল জেল হাসপাতালে

রাজ্যের জেলা ও কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালগুলিতে শয্যা-সংখ্যা প্রায় ৮০০। শয্যা উপচে বছরভরই রোগীদের শুয়ে থাকতে হয় মেঝেতে। কিন্তু ডাক্তার এতই কম যে, বন্দিদের ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নাভিশ্বাস উঠছে কর্তৃপক্ষের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

সারা রাজ্যেই চিকিৎসকের ঘাটতি। অবধারিত ভাবেই যেন সেই অভাবের ছায়া পড়েছে বাংলার সব জেলে!

রাজ্যের জেলা ও কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালগুলিতে শয্যা-সংখ্যা প্রায় ৮০০। শয্যা উপচে বছরভরই রোগীদের শুয়ে থাকতে হয় মেঝেতে। কিন্তু ডাক্তার এতই কম যে, বন্দিদের ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নাভিশ্বাস উঠছে কর্তৃপক্ষের। বাড়ছে রোগে ভুগে বন্দি-মৃত্যুর ঘটনা। এই দুই সমস্যার সুরাহার আশায় নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছে কারা দফতর।

আপাতত কারাকর্তাদের একটাই দাবি: ডাক্তার চাই, ডাক্তার দাও। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত তিন মাসে বিভিন্ন জেল হাসপাতালে অন্তত ২০ জন বন্দি মারা গিয়েছেন। তাঁদের মৃত্যু অসুস্থতার জেরেই। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ও মানবাধিকার কমিশনে। ‘‘রোগীর বাড়াবাড়ি হলে সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হয়। কিন্তু তার জন্যও তো ডাক্তার থাকতে হবে,’’ বলেন এক কারাকর্তা।

নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর এক সময়ে জেলে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করত। ২০০৮-এ সরকার সেই নিয়ম তুলে দেওয়ায় মেডিক্যাল অফিসারের সংখ্যা ২৯ থেকে কমে এখন চারে ঠেকেছে।’’ তার পর থেকে কোনও জেল হাসপাতালেই আর স্থায়ী মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করা হয়নি। তার বদলে চুক্তির ভিত্তিতে ডাক্তার নিয়োগের নিয়ম চালু করে তৎকালীন বাম সরকার। তাতেও ঘাটতি মেটেনি, বরং বেড়েছে। কারা দফতরের হিসেব, বিভিন্ন হাসপাতালে চুক্তির ভিত্তিতে ৪১ জন ডাক্তার থাকার কথা, কিন্তু আছেন ২২ জন। তবে নার্স ও চিকিৎসাকর্মীর কমতি নেই। কারণ, প্রায় জেল হাসপাতালেই ওই দায়িত্ব সামলান বন্দিরা।

ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসা পরিষেবায় যে খামতি থেকে যাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তার নিয়োগের চেষ্টা চলছে। অর্থ দফতর সম্প্রতি ১০ জন ডাক্তার নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এতে কিছুটা হলেও পরিষেবার উন্নতি হবে।’’

কারাকর্তাদেরই এক জন জানান, কেন্দ্রীয় ও জেলা স্তরের জেলে দিনরাতের ডাক্তার থাকার কথা। এর বাইরে যে-সব মহকুমা জেল রয়েছে, সেখানে শুধু একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডাক্তার বসেন। ওই সব জেলে চুক্তির ভিত্তিতে আংশিক সময়ের ১৮ জন ডাক্তার নিয়োগ করেছিল কারা দফতর। কিন্তু তাঁদের বেতন এতই কম যে, টিকে আছেন এক জন। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘আংশিক সময়ের ডাক্তারদের সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন ধার্য করেছে অর্থ দফতর। এই বেতনে কোন ডাক্তার থাকবেন? কেনই বা থাকবেন?’’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা বলছে, জেলে ঢোকানোর আগে বন্দিদের শারীরিক পরীক্ষা আবশ্যিক। কিন্তু যেখানে ডাক্তার নেই, সেখানে এই কাজ কতটা পুঙ্খানুপুঙ্খ হয়, সংশয়ে কর্তারা।

‘‘জেলে খাওয়াদাওয়ার কোনও অভাব নেই। কিন্তু অনেক বিচারাধীন বন্দি আসেন, যথেচ্ছ জীবনযাপনে যাঁদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে। তাঁদের নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা,’’ বলেন এক কারাকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prison Medical Negligence জেল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE