পদে যখন ছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সঙ্গে তাঁর বিস্তর টানাপড়েন হয়েছে। যার জল গড়ায় খাস সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে, যেখানে শেষমেশ রাজ্যকে হার মানতে হয়েছিল।
সেই তিনি এখন প্রাক্তন। তবু টানাপড়েনের শেষ হয়নি। অবসরের দশ মাস পরেও তিনি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠিও দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ওই আইএএস।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক, কমিশনারের পদটি হাইকোর্টের বিচারপতির সমতুল। সেই সুবাদে হাইকোর্টের বিচারপতির সমান হারে বেতন ও অন্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান। এবং অবসরের পরেও অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতির মতোই সুযোগ-সুবিধা তাঁর পাওয়ার কথা বলে কমিশন-সূত্রের খবর।
কিন্তু মীরাদেবী রাজ্যকে জানিয়েছেন, সে সব কিছুই তিনি পাচ্ছেন না। ‘‘সরকারের কাছে আমি জানতে চেয়েছি, হাইকোর্টের বিচারপতিরা অবসরের পরে কী কী সুযোগ-সুবিধা পান।’’ তিনি কী সেই হারে প্রাপ্য পাচ্ছেন না? মীরাদেবীর জবাব, ‘‘শুধু পেনশনটুকু পাচ্ছি।’’
বস্তুত ন্যায্য প্রাপ্যের হিসেব কষলে প্রাক্তন এই নির্বাচন কমিশনারকে রাজ্য সরকার বঞ্চিতই করছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। হাইকোর্ট-সূত্রের খবর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা পেনশন-মহার্ঘভাতার পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ ও এক জন সেবকের খরচ পান। তাঁদের সঙ্গে এক জন নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। জেলায় গেলে সরকারি গাড়ি পান। বেশ কয়েকটি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের খবরের কাগজ, বিদ্যুৎ-বিল, গাড়ির খরচও দেওয়া হয়। এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির কথায়, ‘‘সকলে একই সুবিধা ভোগ করেন, এমনটা নয়। কারণ, এক-একটি হাইকোর্ট অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার এক-এক রকম প্যাকেজ তৈরি করেছে। তবে পেনশন, চিকিৎসা-ব্যয়ের বাইরেও কিছু বাড়তি সুবিধা মোটামুটি সকলেই পেয়ে থাকেন।’’
মীরাদেবী সরকারের কাছে তা-ই চেয়েছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মীরাদেবী কমিশন ছাড়ার সময়ই রাজ্যকে চিঠি দিয়ে তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য সম্পর্কে অবহিত করেন। প্রাপ্য-তালিকায় তিনি কর্নাটক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের গাড়ির খরচের কথাও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাঁর আবেদন এখনও বিবেচনা করেনি। এমতাবস্থায় মীরাদেবী ফের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। নবান্নের খবর: মুখ্যসচিব চিঠিটি স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়ে একটি ‘নীতিগত অবস্থান’ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু নিয়ম থাকলে মীরাদেবীকে এই সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না কেন? এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার মন্তব্য, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার হিসেবে মীরাদেবী পেনশন, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। তা সত্ত্বেও হাইকোর্টের বিচারপতির মতো সুবিধা তিনি কেন চাইছেন, বোঝা মুশকিল।’’ প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য: ‘‘১৯৯৪-এ রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৈরি হওয়া ইস্তক বহু কমিশনার কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু কেউই মারীদেবীর মতো দাবি তোলেননি। ‘‘তা ছাড়া সুবিধা যদি নিতেই হতো, তা হলে উনি নিজেই তো আদেশনামা বার করে কমিশনের বাজেট থেকে ব্যবস্থা করতে পারতেন!’’— মন্তব্য এক আধিকারিকের। মীরা পাণ্ডে সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে জটিলতাই তৈরি করছেন বলে নবান্নের একাংশের অভিযোগ। যদিও কমিশনের একাংশ তা মানে না। এই মহলের যুক্তি: মীরাদেবী কোনও অন্যায় করেননি। প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাঁর যা প্রাপ্য, তা তিনি চাইতেই পারেন। কমিশনের অন্দরে এমন ভাষ্যও শোনা যাচ্ছে যে, অবসরের দশ মাস পরেও মীরাদেবীকে সুবিধাগুলি না-দিয়ে রাজ্য সরকারই আগের বিড়ম্বনার শোধ তুলছে। ‘‘কমিশনার হিসেবে মীরা পাণ্ডে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করে গিয়েছেন। শত চাপেও মাথা নোয়াননি। তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল,’’ বলছেন এক কমিশন-কর্তা। তাঁর সংযোজন, ‘‘মনে হচ্ছে, সরকার সেই ইতিহাস এখনও ভুলতে পারেনি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy