আসিফ আলি। —নিজস্ব চিত্র।
রামনবমীর মিছিল নিয়ে যখন রাজনীতি সরগরম, সেই সময়ে তরজা থেকে বহু দূরে এক মনে সেলাই মেশিন চালাচ্ছেন পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের দর্জি আসিফ আলি। বানাচ্ছেন গেরুয়া পতাকা। সেই পতাকার গায়ে ফুটে উঠছে ‘ঔঁ’ চিহ্ন আর ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা।
পানাগড় বাজারে ছোট্ট দোকান আসিফের। রং চটা দেওয়ালের মধ্যে পুরনো সেলাই মেশিনে মগ্ন বছর বাহান্নোর অসিফ একনাগাড়ে বলে চলেন, ‘‘এক-দু’দিন নয়, টানা দু’দশক ধরে রামনবমীর পতাকা তৈরি করছি। একটু রোজগার হয় আর কী।’’ গত ক’মাস নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই আসিফ ও তাঁর পরিবারের। নির্দিষ্ট মাপ, ছকে গেরুয়া পাতলা কাপড় কাটা, তা সেলাই করে ঝালর বসানো, পতাকা তৈরির ঢের কাজ এখন, জানাল আসিফের পরিবার।
পতাকার বরাতও মেলে ভালই। শনিবার পানাগড় বাজার, গৃহস্থের বাড়ির ছাদে টাঙানো গেরুয়া পতাকাগুলির বেশির ভাগই ‘আমার তৈরি। জানেন, অনেকেরই আমার তৈরি পতাকা পছন্দ’’— চোখ ভিজে ওঠে আসিফের। ক্রেতার তালিকায় নানা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন যেমন রয়েছে, রয়েছেন পানাগড়ের সাধারণ মানুষও।
রাজ্য জুড়ে রামনবমীর মিছিল নিয়ে যে চাপানউতোর, তার প্রভাব কখনও পড়েনি? প্রশ্ন শুনেই ফোঁস করেন ছিপছিপে চেহারার দর্জি। বলেন, ‘‘হানাহানি নয়। সবাই এক সঙ্গে থাকব, এটাই ঐতিহ্য।’’ এলাকার প্রবীণেরা মনে করিয়ে দেন পানাগড়ে নানা ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের কথা। জানা গেল, বহু বছর আগে সৈয়দ শাহ পাহাড়ি নামে এক ফকির আসেন পানাগড়ে। তিনি ‘দানবাবা’ নামে খ্যাত। তাঁর মৃত্যুর পরে জমিদার দেবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দান করা জমিতে হয় দানবাবার মাজার। প্রতি বছর সেখানে মেলা দেখতে আসেন সব ধর্মের মানুষ। সেখানে সপরিবার যান আসিফও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy