Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘সেভ ফুড-সেভ লাইফ’, বার্তা সূর্যের

বছর দেড়েক আগে ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবি স্টেশনের সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি আসানসোলের বিবি কলেজের বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র। অভুক্ত পথশিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ইচ্ছেটা তখন থেকেই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

যাত্রা-শুরু: সাইকেলে সূর্য। নিজস্ব চিত্র

যাত্রা-শুরু: সাইকেলে সূর্য। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

রেল স্টেশনের ডাস্টবিন থেকে জনা কয়েক শিশুকে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে খেতে দেখেছিলেন কলেজ পড়ুয়া সূর্য দে। বছর দেড়েক আগে ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবি স্টেশনের সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি আসানসোলের বিবি কলেজের বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র। অভুক্ত পথশিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ইচ্ছেটা তখন থেকেই তাঁর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

তাই বছর খানেক আগে আসানসোলের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেই কাজ শুরুও করেছেন সূর্য। কিন্তু কাজ শুরুর পরে তিনি অনুভব করেন, খাবার অপচয় বন্ধ করার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গ্রাম ও শহরের হোটেল রেস্তোরাঁ ও অনুষ্ঠানবাড়িতে বেশি হয়ে যাওয়া খাবার পথশিশুদের মধ্যে বিলি করার আবেদন জানাতে হবে। ছোট্ট শহরে সীমাবদ্ধ না থেকে বড় পরিসরে এই কাজ শুরু হলে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবেন। এই কাজে সফল হলে একদিন হয়তো আর কোনও পথশিশু অভুক্ত থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।

রাজ্যের সর্বত্র এই বার্তাই পৌঁছে দিতে শুক্রবার সাইকেল চালিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হন সূর্য। জামায় ও সঙ্গে থকা ব্যানারে লেখা রয়েছে একটি স্লোগান। ‘সেভ ফুড, সেভ লাইফ’। তাঁর লক্ষ্য চলার পথে প্রত্যেকটি বড় শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নিজের আবেদন রাখবেন। ছোট-বড় হোটেল, রেস্তোরাঁর মালিকদের কাছেও একই বার্তা তুলে ধরবেন তিনি। আপাতত কলকাতার গড়িয়ায় এই কাজে যুক্ত একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিস পর্যন্তই তাঁর গন্তব্য। তবে শীঘ্রই দেশের নানা প্রান্তে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এই বার্তা পোঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে তাঁর।

কী ভাবে শুরু হল তাঁর কাজ? ঝাড়খণ্ডের চিরকুণ্ডার বাসিন্দা সূর্যের কথায়, ‘‘কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্টেশনের ওই দৃশ্য দেখে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইচ্ছে হলেও একা শুরু করতে ভয় পেতাম। মাস কয়েক বাদে একদিন সংবাদপত্র পড়ে জানলাম আসানসোলের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু বহুদিন থেকে একাই এই কাজটি করছেন। আর থেমে না থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজে নেমে পড়লেন।’’

প্রসঙ্গত, এ দেশে খালি পেটে রোজ রাতে শুতে যাওয়া শিশুদের সংখ্যাটা গত তিন বছরে আরও বেড়েছে। বেড়েছে অপুষ্টি। স্রেফ খেতে না পেয়ে আরও বেশি শুকিয়ে যাওয়া কচি কচি মুখগুলোর সংখ্যাও বেড়েছে লাফিয়ে। ১১৯টি দেশের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের (‌গ্লোবাল হাংগার ইনডেক্স বা জিএইচআই) এই ফল প্রকাশ করতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এ দেশের ক্ষুধার প্রকৃত চেহারাটা। ২০১৪ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৭৬টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ৫৫। ২০১৬-য় ১১৮টি দেশের মধ্যে তা নেমে আসে ৯৭-এ। আর এ বছর ১১৯টি দেশের মধ্যে নেমে এসেছে ১০০য়!

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কলেজ পড়ুয়া সূর্যের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। শুক্রবার সকালে আসানসোলের রবীন্দ্রভবন থেকে তাঁর সাইকেল যাত্রার সূচনা করে চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ওর বার্তা সাধারণের কাছে পৌঁছলে একদিন বিপ্লব আসবে।’’ ছাত্রের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু বলেন, ‘‘সকলেই কেরিয়ার তৈরিতে ব্যস্ত। কিন্তু সূর্য ব্যতিক্রমি। ওকে সম্মান জানাই।’’ ছেলের এই উদ্যোগে খুশি মা অপর্ণা দে, বাবা সঞ্জয় দে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE