Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চ্যাংরাবান্ধায় দু’দেশের বৈঠক ঘিরে উন্মাদনা

ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পরে দু-দেশের জেলাশাসক পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। স্বভাবতই এই বৈঠক ঘিরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু তাতে অনেকটাই বাধ সাধল বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তের চ্যাংরাবান্ধায় দু-পারেই জড়ো হয়েছিলেন অনেক ছিটমহলবাসী। কথা ছিল বৈঠকের পরে দু-দেশের প্রতিনিধিরা হেঁটে ঘুরবেন সীমান্ত। কিন্তু, বৃষ্টির জন্য সেই কর্মসূচি স্থগিত করে দিতে হয়। অবশ্য তাতে কী! বৃষ্টিতে ভিজেই উচ্ছ্বাসে ভাসলেন ছিটমহলের মানুষ।

চলছে বৈঠক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

চলছে বৈঠক। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
চ্যাংরাবান্ধা (কোচবিহার) শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পরে দু-দেশের জেলাশাসক পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। স্বভাবতই এই বৈঠক ঘিরে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু তাতে অনেকটাই বাধ সাধল বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তের চ্যাংরাবান্ধায় দু-পারেই জড়ো হয়েছিলেন অনেক ছিটমহলবাসী। কথা ছিল বৈঠকের পরে দু-দেশের প্রতিনিধিরা হেঁটে ঘুরবেন সীমান্ত। কিন্তু, বৃষ্টির জন্য সেই কর্মসূচি স্থগিত করে দিতে হয়। অবশ্য তাতে কী! বৃষ্টিতে ভিজেই উচ্ছ্বাসে ভাসলেন ছিটমহলের মানুষ।

বেলা ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠকের পরে দু-দেশের প্রতিনিধিরা যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করলেন, ৬ জুলাই থেকে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষক দল জনগণনা এবং ছিটমহলের বাসিন্দারা কোন দেশে থাকতে চান সেই বিষয়ে মতামত যাচাইয়ের কাজ শুরু করবেন। টানা দশদিন ওই সমীক্ষা চলবে। সমস্যা দেখা দিলে ফের দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। আগামী ৩১ জুলাই মাঝরাতে বাংলাদেশের অধীন ১১১টি ছিট মহলের বাসিন্দা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ভারতের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।

বৈঠকের শুরু থেকে এদিন ফলাফল জানতে সীমান্তের ওপারে কুড়িগ্রাম, নিলফামারির প্রচুর সাধারণ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করতে থাকেন। বিকেল নাগাদ বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে জানতে পেরে তাঁরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। কুড়িগ্রামের জেলাশাসক এবিএম আজাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৪ জন আধিকারিক এদিনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে ভারতীয় আধিকারিকদের নেতৃত্ব দেন কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন। ‘ইন্দো বাংলাদেশ ডিএম-ডিসি মিটিং অন এক্সচেঞ্জ অব এনক্লেভস’ শীর্ষক বৈঠকের শেষে দুই জেলাশাসক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানান, দুই দেশের মধ্যে থাকা ১৬২টি ছিটমহলে ৬ জুলাই থেকে যৌথ সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। সমীক্ষা চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। এর পরে আবার দুই দলের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসবেন। সমীক্ষক দলে দুই দেশের কতজন প্রতিনিধি থাকবেন সেই বিষয়ে অবশ্য দুই জেলাশাসক স্পষ্ট করে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। কোচবিহারের জেলাশাসক বলেন, “এই মুহূর্তে সব বলা সম্ভব নয়।” কুড়িগ্রামের জেলাশাসক বলেন, “যৌথ সমীক্ষক দল ছিটমহলের প্রতিটি বাড়িতে ঘুরে জন গণনার পাশাপাশি কে কোন দেশে থাকতে ইচ্ছুক সেটাও জানবেন। ওই বিষয়ে মতামত জানাতে ইতিমধ্যে লিফলেট বিলি করে এবং মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।” এদিনের বৈঠকে ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিনিধিরা জানান, কোনও পরিবার অন্য দেশে চলে যাবে জেনে সমাজবিরোধীরা যেন লুঠপাট চালানোর সুযোগ না পায় সে জন্য পর্যাপ্ত নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোচবিহার এবং কুড়িগ্রামের জেলাশাসক বলেন, “ছিটমহলে শান্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

এদিনের বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন লালমণি হাটের জেলাশাসক মহম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার সফিউল আলম, পচাগরের জেলাশাসক মহম্মদ সালাউদ্দিন, পুলিশ সুপার মহম্মদ তবারক উল্লাহ, নিলফামারির জেলাশাসক মহম্মদ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের আধিকারিক আহমেদ বজলুর রহমান, রংপুরের জেনারেল সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল মান্নান প্রমুখ। ভারতীয় দলে ছিলেন কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব, অতিরিক্ত রেজিস্টার জেনারেল এসকে চক্রবর্তী, রাজশাহীর সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনার সন্দীপ মিত্র, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব অরুণ সেন, কোচবিহার জেলা ভূমি আধিকারিক সঞ্জয়কুমার দাস।

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “দুই দেশের প্রশাসনের ওই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আশা করছি পুরোপুরি সুষ্ঠুভাবে গোটা হস্তান্তর প্রক্রিয়া মিটবে। এবার জনগণনার কাজে ছিটমহলের লোকদেরও যুক্ত করা হলে আরও ভাল কাজ হবে বলে আমাদের ধারণা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE