বোলপুরে আত্মঘাতী ধর্ষিতার বাড়িতে গিয়ে বীরভূম জেলা পুলিশকে একহাত নিলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য সুষমা সাহু। আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেও।
শুক্রবার বিকেলে মেয়েটির বাড়ি থেকে বেরনোর পথে সুষমাদেবীর মন্তব্য, ‘‘ধারণা ছিল, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন মহিলা, তখন এখানকার মহিলারা নিরাপদ থাকবেন। তাঁদের সম্মান, অধিকারের জন্য কেউ আওয়াজ তুলবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, উনি শুধু ক্ষমতা দখলের জন্যই এসেছেন।’’
মহিলা কমিশনের প্রতিনিধির এই মন্তব্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘উনি যা বলেছেন, তা ওঁর বলার কথা নয়। কমিশনের সদস্যা হয়েও রাজনীতি করেছেন উনি।’’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরি হচ্ছিল বোলপুরের রজতপুরের ওই তরুণীর পরিবারের। অভিযোগ, সেখানে কর্মরত রাজমিস্ত্রি শেখ হাফিজুল মেয়েটির ‘আপত্তিকর’ ছবি তোলে। সেই ছবি প্রকাশ্যে আনার হুমকি দিয়ে একাধিক বার মেয়েটিকে সে ধর্ষণ করে। সেই লজ্জায় মেয়েটি ১২ ডিসেম্বর গায়ে আগুন দেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ হাফিজুলকে গ্রেফতার করে। সে ঘটনারই খোঁজ নিতে এ দিন বোলপুরে যান সুষমাদেবী। নির্যাতিতার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলার পরেই তিনি বীরভূমের পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীরকুমারের খোঁজ করেন। পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতিতে এগিয়ে যান বোলপুর থানার আইসি সুবীর কুমার চক্রবর্তী।
এসপি আসেননি শুনে ক্ষুব্ধ সুষমাদেবী আইসি-র সঙ্গে কথা বলতে চাননি। এসপি-কে ফোন
করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি কি চড়ুইভাতি করতে গিয়েছেন? এখানে আসেননি কেন?’’ এর পরেই তাঁর তোপের মুখে পড়েন সুবীরবাবু। সুষমাদেবীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এই উর্দি, ব্যাজ কেন পরেন জানেন? সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য।’’ কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিলেন আইসি। তাঁকে থামিয়ে সুষমাদেবী বলেন, ‘‘বেতন কী জন্য পান? মুখ দেখানোর জন্য? জানেন, পশ্চিমবঙ্গে কত মহিলার উপরে নির্যাতন হয়— না জানলে উর্দি খুলে ফেলুন।’’
সুষমাদেবীর অভিযোগ, ওই তরুণীর পরিজনদের স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সাহায্য করা হয়নি। অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনও চিকিৎসক তাঁকে দেখেননি। সে জন্য মেয়েটিকে বর্ধমানে নিয়ে যেতে হয় তাঁর আত্মীয়দের।
এ ব্যাপারে পরে মন্তব্য করতে চাননি আইসি বা পুলিশ সুপার। তবে সুষমাদেবীর মন্তব্য কানে যেতেই জেলা তৃণমূলের নিচুতলার অনেকে বলতে শুরু করছেন, ‘‘রাজস্থানে মালদহের শ্রমিক আফরাজুলের খুনের ঘটনায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বিঁধেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে এ দিনের ঘটনাটা নেহাত কাকতালীয় বলে মনে হচ্ছে না।’’ আর অনুব্রত বলেছেন, ‘‘উনি জানেন না। ওই নির্যাতিতার পরিবারের পাশে শুধু তৃণমূলই দাঁড়িয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy