Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গির বিপদ কার কত, বার্তা লুকিয়ে দেহেই

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, মুম্বই আইআইটি এবং বীকানের আইআইটি-র এক দল গবেষকের দাবি, ডেঙ্গির প্রভাব কার ক্ষেত্রে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সেই বার্তা লুকিয়ে থাকে শরীরেই। ‘ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত তাঁদের গবেষণাপত্রে এই গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি কতটা মারাত্মক হবে তার দিশা দেখাবে শরীরের ছ’টি মাইক্রোপ্রোটিন।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

ডেঙ্গি কারও অল্পেতেই সারছে। কারও ক্ষেত্রে তা প্রাণঘাতী। রোগটির এই অদ্ভুত চরিত্র বুঝে ওঠার পথ মিলল এ বার!

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, মুম্বই আইআইটি এবং বীকানের আইআইটি-র এক দল গবেষকের দাবি, ডেঙ্গির প্রভাব কার ক্ষেত্রে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সেই বার্তা লুকিয়ে থাকে শরীরেই। ‘ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত তাঁদের গবেষণাপত্রে এই গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি কতটা মারাত্মক হবে তার দিশা দেখাবে শরীরের ছ’টি মাইক্রোপ্রোটিন।

অনেক ক্ষেত্রে জ্বর কমে যাওয়ার পরে বাড়ি ফিরে গিয়েও ফের মারাত্মক অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা হামেশাই ঘটে। শরীরে রোগের সংক্রমণ কেমন হবে, আগে থেকে তা বুঝতে না পারাতেই এই বিপত্তি। তিন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের যৌথ গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আইএল৭, টিএনএফআলফা জাতীয় ছ’টি মাইক্রোপ্রোটিন এ ক্ষেত্রে ‘মার্কার’-এর কাজ করবে। সেগুলির উপস্থিতি ও পরিমাণই বলে দেবে ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া কার ক্ষেত্রে কতটা হবে। প্রোটিনগুলির হ্রাস-বৃদ্ধি শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের প্রভাবেই হচ্ছে কি না এবং ডেঙ্গি জীবাণুর প্রভাব কতটা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয় এখনও। তা ছাড়া, ডেঙ্গি জীবাণুর জিন এখন বদলে যাচ্ছে ঘন ঘন। ফলে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে এগুলির বৈশিষ্ট্যও। এই কারণে ওই জীবাণুর বদলাতে থাকার এই নয়া চরিত্র সম্পর্কে আরও ওয়াকিবহাল হতে চাইছেন গবেষকেরা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার, বিয়াস সামন্ত, অভীক কারক, শতরূপা দেব এবং সুমিত বর্মা এই প্রকল্পে কাজ করেছেন। শিক্ষক-চিকিৎসক অরুণাংশুবাবু বলেন, ‘‘ঠিক যে ভাবে এখন রক্তে ডেঙ্গির জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়, ঠিক তেমন ভাবেই এই প্রোটিনগুলি নির্ণয় করে কার শরীরে ডেঙ্গি ভয়াবহ হবে তা বোঝা যাবে। তাতে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচবে। তবে সে ক্ষেত্রে এটি নির্ণয়ের কিট আবিষ্কার করা দরকার।’’

জ্বরের সময়ে দেহে কয়েক হাজার প্রোটিন তৈরি হয়। তার মধ্যে থেকে ওই ৬টি মাইক্রোপ্রোটিনকে চিহ্নিত করার কাজটি ছিল খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার মতো। দীর্ঘ চেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে। শুধু ডেঙ্গি নয়, ম্যালেরিয়া রোগী, এমনকী, একেবারে সুস্থ মানুষের রক্তের নমুনাও পরীক্ষা করা হয়েছিল, যাতে প্রোটিনের উপস্থিতির পার্থ্যকটা নিশ্চিত করা যায়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা এই গবেষণার ফল নিয়ে খুবই আশাবাদী। তাঁরা জানিয়েছেন, কোন ডেঙ্গি ভয়ানক চেহারা নিতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা আগেও হয়েছে। কিন্তু তেমন কোনও জরুরি তথ্য বেরিয়ে আসেনি। এই গবেষণাটি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবীণ প্যাথলজিস্ট সুবীর দত্ত জানান, টাইপ বদলে ডেঙ্গি ক্রমে ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে। তাই ওই মাইক্রেপ্রোটিনগুলির উপস্থিতি নির্ণয় করা গেলে বহু বিপর্যয় ঠেকানো যাবে।

গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গিতে মৃত্যু বাড়ছে। দিল্লিতে এবং এ রাজ্যে গত বছর এবং চলতি বছরে মারা গিয়েছেন অনেকে। চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে অজানা রোগ বা অজানা জ্বরে মারা গিয়েছেন বলে লেখা হয়েছে অনেকের ক্ষেত্রে। আবার হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করেও বাঁচানো যায়নি অনেককে। এমন মৃত্যু কী ভাবে ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে চিকিৎসকেরাও অন্ধকারে। তাঁদের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই আচমকা ডেঙ্গি রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে। অনেকে আবার বাড়িতেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। কার ক্ষেত্রে এবং কেন রোগটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে এই গবেষণা থেকে বলে দাবি গবেষকদের।

অপেক্ষা এখন ওই ৬টি মাইক্রোপ্রোটিনের উপস্থিতি ও মাত্রা জানার একটি কিট-এর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE