Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেয়েটা উঠে বলল, বিয়ে রুখুন আমার

নাবালিকাদের বিয়ে ও নারী পাচার নিয়ে সচেতনতা শিবির চলছিল হরিহরপাড়ার হাজি আলম বক্স সিনিয়র মাদ্রাসায়।

সাকিনা খাতুন

সাকিনা খাতুন

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০৪:০৩
Share: Save:

নাবালিকাদের বিয়ে ও নারী পাচার নিয়ে সচেতনতা শিবির চলছিল হরিহরপাড়ার হাজি আলম বক্স সিনিয়র মাদ্রাসায়।

মঞ্চে বিডিও হাজির, থানার ওসি-ও আছেন। সামনে ছাত্রীরা। একেবারে পিছনে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রী।

কী হয়েছে তোমার?

কাঁদতে-কাঁদতেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে: ‘‘বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। ছেলেটা পাশের গ্রাম ডল্টনপুরে থাকে, পঁচিশ বছর বয়স, লরি চালায়। আমাদের বাড়িতে তিন বার এসেছে। কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাই না। ওসি সাহেব, বিডিও সাহেব আমার বিয়ে বিয়ে বন্ধ করুন। আমি পড়তে চাই!’’

কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত সকলে। তার পরেই সাকিনা খাতুন নামে ছাত্রীটিকে ঘিরে তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। তাকে অন্য ঘরে ডেকে কথা বলতে শুরু করেন শিক্ষকেরা। প্রশাসনের কর্তারা তার বাবা-মাকে ডেকে পাঠান।

কাছেই কাজিপাড়া থেকে চলে আসেন বাবা আলি হোসেন খান ও মা মর্জিনা বিবি। হরিহরপাড়া থানার ওসি কার্তিক মাজি জানতে চান, ‘‘মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন কেন?’’ আলি বলেন, ‘‘আমার তিন মেয়ে। সব্জি বিক্রি করে চলে। পাত্র পণ নেবে না বলেছে। তাই বিয়ে দিচ্ছি।’’ তাঁদের বলা হয়, নাবালিকার বিয়ে বেআইনি। দরকারে গ্রেফতার করা হবে। শেষে তাঁরা মেনে নেন, সাবালক হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। বুধবার মুর্শিদাবাদের মাদ্রাসায় এই কাণ্ডের পরে সকলের বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু সাকিনা বেঁকে বসে, বাড়ি সে যাবে না। তার ভয়, ‘‘বাড়ি গেলেই ওরা বিয়ে দিয়ে দেবে। বৃহস্পতিবার থেকে গরমের ছুটি। তার পর আমার আর স্কুলে আসা হবে না।’’ শিবিরে ছিল বিয়ে রুখতে ‘কন্যাশ্রীযোদ্ধা’র দায়িত্ব নেওয়া ৩২ জন উঁচু ক্লাসের ছাত্রী। তারা বলে, ‘‘যদি পড়া চালাতে চাও, আমরা পাশে আছি।’’ হরিহরপাড়া ব্লক অফিসে নিয়ে গিয়ে বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল ও যুগ্ম বিডিও উদয় পালিত তাকে অভয় দেন, ‘‘তোমার বাবা-মা কথা দিয়েছেন, এখনই বিয়ে দেবেন না।’’

আরও পড়ুন: দু’দিনে পুলিশের দুই ছবি দেখল কলকাতা

তা-ও মেয়ের ভয় যায় না! সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্লক অফিসেই ঠায় বসে থাকে সাকিনা। তাকে বোঝানো হয়, ব্লক অফিসে থাকার ব্যবস্থা নেই। বাড়ি যেতে না চাইলে হোমে পাঠানো হবে। তাতেও সে রাজি!

এই মুর্শিদাবাদেই তো বিয়ে করবে না পণ করে স্কুলের বায়োলজি ল্যাবে তিন মাস ঠাঁই নিয়ে মাধ্যমিক দিয়েছে লালবাগের জুলেখা খাতুন। সে-ও আপাতত বহরমপুরে মেয়েদের সরকারি হোমে। তবে রাতে সাকিনার পরিজনেরা অনেক বুঝিয়ে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘‘মেয়েটা পড়াশোনায়
আগ্রহী। রেজাল্টও ভাল। ওর বিয়ের কথা আগে জানলে তখনই আমরা ব্যবস্থা নিতাম।’’ আর, বৃহস্পতিবার মাদ্রাসায় ফিরে সাকিনা হাসিমুখে বলে, ‘‘ওষুধে কাজ হয়েছে। বাবা-মা বলেছে, পড়াবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Wedding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE