Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এগারোটা বাজে তো! পা চালাও

যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় একই সময়। যাত্রাপথও ছিল একই। তবু শৃঙ্গ ছুঁয়ে, সুস্থ শরীরে নীচে নেমে আসতে পারলেন চার জন। আর বিপদের মুখে পড়লেন অন্য চার জন। এক জন মৃত, দু’জন নিখোঁজ আর দু’দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হাসপাতালে পৌঁছেছেন এক জন।

শৃঙ্গে মলয় মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

শৃঙ্গে মলয় মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় একই সময়। যাত্রাপথও ছিল একই। তবু শৃঙ্গ ছুঁয়ে, সুস্থ শরীরে নীচে নেমে আসতে পারলেন চার জন। আর বিপদের মুখে পড়লেন অন্য চার জন। এক জন মৃত, দু’জন নিখোঁজ আর দু’দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হাসপাতালে পৌঁছেছেন এক জন।

সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, মলয় মুখোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রমেশ রায়রা ২০ মে সন্ধেয় সাউথ কল অর্থাৎ ক্যাম্প ফোর থেকে চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেছিলেন। পরের দিন ভোরে সামিট ছুঁয়ে নিরাপদে নেমে আসেন। এক যাত্রায় এই পৃথক ফলের পিছনেই থেকে যাচ্ছে প্রস্তুতি ও সক্ষমতার তারতম্যের প্রশ্নটি। সেটাই বিপদ ডাকছে বলে অভিজ্ঞ আরোহীদের মত।

সত্যরূপদের পিছনেই ছিলেন সুনীতা হাজরা, গৌতম ঘোষ, পরেশ নাথ ও সুভাষ পাল। এই চার জনের অভিযান আয়োজক সংস্থা অবশ্য আলাদা ছিল। তাই কাছাকাছি থাকলেও দলবদ্ধ ভাবে ছিলেন না আট জন।

২১ তারিখ ভোর ৫:৪৫-এ সত্যরূপরা পৌঁছে যান শৃঙ্গে। জিপিএস যন্ত্রের মাধ্যমে ইন্টারনেটে দেখা যায় উচ্চতার রিডিং ৮৮৪৮ মিটার। তখনও ভাবা হয়েছিল, কাছাকাছিই নিশ্চয় আছেন বাকি চার জন। মঙ্গলবার বেসক্যাম্প থেকে টেলিফোনে রমেশ জানালেন, সামিট হয়ে যাওয়ার পরে নামতে শুরু করেন তাঁরা। মলয়ের চোখে স্নো ব্লাইন্ডনেস হওয়ায় আস্তে নামছিলেন তিনি। সাউথ সামিটের (৮৭৪৯ মিটার) কাছে ওঁদের দেখা হয় সুভাষের সঙ্গে। তখনই বেশ ক্লান্ত সুভাষ। তবে অতটা দূর পৌঁছে গিয়েছেন দেখে রমেশরা ভেবেছিলেন, নিশ্চয় সামিট করেই ফেলবেন।

আরও খানিকটা নীচে দেখা হয় গৌতম ও সুনীতার সঙ্গে। তখন সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে। দু’জনেই ক্লান্ত। অক্সিজেন শেষের মুখে। মন চাইলেও অতিরিক্ত অক্সিজেন দিয়ে সাহায্য করতে পারেননি রমেশরা। তবে একটু খাবার জল দিয়ে দিয়েছিলেন সঙ্গে। ‘‘বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি এগোও,’’ সতর্ক করেছিলেন রমেশ।

শারীরিক সক্ষমতার তারতম্যেই পিছিয়ে পড়া। পিছিয়ে পড়ার কারণে অক্সিজেনে ঘাটতি। আবহাওয়া খারাপ হওয়া। ক্লান্ত, অশক্ত শরীর ক্রমাগত বাড়িয়ে তোলে বিপদ। দুর্বল সঙ্গীদের জন্য বিপদে পড়েন অভিজ্ঞরাও। দীর্ঘদিন ধরে একাধিক সাত-হাজারি শৃঙ্গ ছোঁয়া গৌতম যে কারণে এ বার আটকে গিয়েছেন বলে বলে অন্য আরোহীদের ধারণা।

২১শে বিকেলের পর ক্যাম্প ফোরে পৌঁছন রমেশ। সত্যরূপ ও রুদ্র একটু আগেই ঢুকেছিলেন। খানিক পরে চলে আসেন মলয়ও। আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছে তখনই। রমেশ বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম, সন্ধে হলেও নেমে চলে আসবে সুনীতারা। সারা রাত ফেরেনি ওরা।’’

পরের দিন সকালে যখন ক্যাম্প ফোর থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই ওঁরা সুভাষকে দেখেন। তখনও জানতেন না, এটাই শেষ দেখা সুভাষের সঙ্গে। সুনীতা, গৌতমদের সে সময় খুঁজে পাননি রমেশরা। ক্যাম্প টু হয়ে বেসক্যাম্পে নেমে আসেন ওঁরা। সেখানেই এখন পুরোদমে চলছে উদ্ধারকাজ। বেশ কিছু বিদেশি অভিযাত্রীর মৃতদেহ নামানো হয়েছে। তবে আবহাওয়া খুব ভাল নেই। সুভাষের দেহ এখনও নামানো হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

everest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE