Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষক বাবার নাম এড়াতে হাইকোর্টে

পুলিশ জানায়, বছর তিনেক আগে বারুইপুরের ইন্দ্রপালা গ্রামের ভীষ্মদেব নস্কর নামে এক যুবক পড়শি নাবালিকাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গ্রেফতার করলেও পরে সে জামিন পায়। ওই নাবালিকার ভাই মুম্বইয়ে থাকেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্মের শংসাপত্রে ‘ধর্ষক’ বাবার নাম চান না মা। তিনি চান, জন্মের নথিতে মায়ের নামই থাকুক। কিন্তু হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ মায়ের ইচ্ছা মেনে ওই সন্তানের জন্মের শংসাপত্র দিতে রাজি নন বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়েই মেয়ের লড়াইয়ে শরিক হিসেবে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন নবজাতকের দিদিমা।

পুলিশ জানায়, বছর তিনেক আগে বারুইপুরের ইন্দ্রপালা গ্রামের ভীষ্মদেব নস্কর নামে এক যুবক পড়শি নাবালিকাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গ্রেফতার করলেও পরে সে জামিন পায়। ওই নাবালিকার ভাই মুম্বইয়ে থাকেন। নাবালিকার মা গত বছর ছেলের কাছে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, বাড়িতে একা থাকার সুযোগ নিয়ে নাবালিকাকে ফের ধর্ষণ করে ভীষ্মদেব। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মেয়ে যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা, মুম্বই থেকে বাড়ি ফেরেন মা। সব জেনে পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি। ফের গ্রেফতার হয় ভীষ্মদেব। এখন সে জেলে।

ধর্ষণের ঘটনায় মেয়ের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে গত বছর ওই নাবালিকার মা বিচারপতি দেবাংশু বসাকের আদালতে মামলা করেন। বিচারপতি বসাক গত ডিসেম্বরে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন, ওই অন্তঃসত্ত্বাকে অবিলম্বে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। স্থানীয় সূত্রের খবর, চিকিৎসকের কাছে গর্ভপাতের আর্জি জানিয়েছিলেন নাবালিকার মা। কিন্তু ২০ সপ্তাহ কেটে যাওয়ায় চিকিৎসক সেই ঝুঁকি নিতে চাননি।

ইতিমধ্যে গর্ভবতীর বিয়ে দেওয়া হয়। তবে তার স্বামীর শর্ত, গর্ভস্থ শিশুকে তিনি পিতৃপরিচয় দেবেন না। ৫ ফেব্রুয়ারি বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে মেয়েটি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। ৮ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মা ও সন্তানকে ছুটি দেন। নবজাতকের দিদিমা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে শিশুটির জন্মের শংসাপত্র চেয়ে আবেদন করেন। অভিযোগ, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে

একটি ফর্ম দিয়ে জানান, বাবা ও মায়ের নাম এবং আধার কার্ড জমা দিতে হবে। দিদিমা জানান, ওই সন্তানের বাবার পরিচয় দিতে চান না তাঁর মেয়ে। তিনি চান, সন্তানের জন্মের নথিতে মায়েরই নাম লেখা হোক। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। দিদিমা তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

মেয়েটির আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী শুক্রবার জানান, পুরো ঘটনা জানিয়ে এবং ৩০ দিনের মধ্যে জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার আবেদন করে ১৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেওয়া হয় হাসপাতালের সুপার, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তার পরে ১৫ দিনেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের উত্তর মেলেনি। তাই জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের আদালতে ফের মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন দিদিমা। এ দিন সেই মামলা দায়ের হয়েছে। আগামী ২৩ মার্চ মামলার শুনানি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE