Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অনুব্রতর ‘দুর্নীতি’, ফাঁস মুকুলের

বীরভূমে দাঁড়িয়ে শনিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতর বিরুদ্ধে চালকল ও জমি-দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন মুকুল রায়। বললেন, ‘‘সব কাগজ হাতে নিয়ে বলছি। এটা ট্রেলার মাত্র। এর জবাব দিতে হবে অনুব্রতকে।’’

অনুব্রত মণ্ডল এবং মুকুল রায়।

অনুব্রত মণ্ডল এবং মুকুল রায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫১
Share: Save:

আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে অনুব্রত মণ্ডলকে পাশে নিয়ে বীরভূমে সভা করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘কেষ্ট (অনুব্রত)-র বিরুদ্ধে ওরা (বিজেপি) সব সময় কুৎসা করে।
মাথা গরম হয়ে যায়। তার জবাব দিলেই ওর দোষ!’’

সেই বীরভূমে দাঁড়িয়ে শনিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতর বিরুদ্ধে চালকল ও জমি-দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন মুকুল রায়। বললেন, ‘‘সব কাগজ হাতে নিয়ে বলছি। এটা ট্রেলার মাত্র। এর জবাব দিতে হবে অনুব্রতকে।’’ তার জবাবে অনুব্রত বলেছেন, ‘‘সব মিথ্যে। উনি মিথ্যুক।’’ আর বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় অন্য এক সমাবেশে যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলে বেনো জল যাঁর নেতৃত্বে ঢুকে ছিল, তাঁকেই আমরা বের করে দিয়েছি।’’

বীরভূমের জনসভায় হাতের মুঠোয় চাল দেখিয়ে জনতার উদ্দেশে মুকুলের প্রশ্ন, ‘‘এটা কোন রাইস মিলের জানেন? মিলটার নাম ভোলেবোম রাইস মিল। এর মালিক কে? কবে তৈরি?’’ নিজেই জানান, ‘‘২০১৬-১৭ সালে ১৮,০২৭ বস্তা চাল অন্ত্যোদয় যোজনায় সরবরাহ করেছে এই মিল।’’ মুকুলের সংযোজন, ‘‘বোলপুর থানার অন্তর্গত কালিকাপুর, গয়েশপুর, খাসকদমপুর ও বোলপুর মৌজায় ৪২৫ কাটা জমি কেনা হয়েছে ২০১৪ সালের পরে। তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন এ সবের মালিক কে। নামটা তিনিই বলবেন।’’ রাইস মিল নিয়ে কিছু না বললেও অনুব্রত দাবি করেছেন, ‘‘গয়েশপুর মৌজায় জমি ২০০২ সালে কেনা হয়েছে। সেটা আমি প্রমাণ করে দিতে পারি।’’

আরও পড়ুন: ফের মনুয়া কাণ্ড, যুবক খুনে ধৃত স্ত্রী ও প্রেমিক

মুকুল-কেষ্টর বাগ্‌যুদ্ধ এই প্রথম নয়। গত নভেম্বরে রাজনগরের প্রকাশ্য জনসভা থেকেই মুকুলকে ‘ভুঁইফোড়,’ ‘কুলআঁটি’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতা বলে কটাক্ষ করেছিলেন অনুব্রত। ২৪ ডিসেম্বর সিউড়ির মিছিল থেকে অনুব্রতর নাম না করে মুকুলের হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘পরের সভায় আমি ওঁর সম্পর্কে এমন কিছু বলব, তাতে হয় দলই ওকে বার করে দেবে, নয়তো নিজেই দল ছেড়ে দেবে। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’’ তাঁর দু’দিন পরে পাল্টা সভা করে অনুব্রত জানিয়ে দেন, ‘‘উনি বলুন, আমি অপেক্ষা করছি। না বললে দুঃখ পাব।’’ এ দিন যে অভিযোগ তৃণমূলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তুলেছেন সেটাই শেষ নয়, দাবি মুকুলের।

গত ডিসেম্বরে রাজনগরের তাঁতিপাড়ায় জনসভা করতে চেয়েও অনুমতি পায়নি বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ ছিল, প্রথমে সভার অনুমতি দিলেও পরে পৌষমেলার ‘অজুহাত’ দিয়ে তা বাতিল করে পুলিশ, প্রশাসন। প্রতিবাদে ২৪ তারিখ বিক্ষোভ মিছিল করে বিজেপি। মিছিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দলীয় কর্মীদের পুলিশ ও তৃণমূলের বাধায় পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিনও বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ, প্রশাসন মিলে রাজনগরের হিরাকুনির সভাতেও কর্মীদের আসতে দেয়নি।

জনসভা থেকে মুকুল রাজনগর ও চন্দ্রপুর থানার ওসিদের উদ্দেশে কটাক্ষ করেন, ‘‘আপনারা ভাল কাজ করেছেন। এ জন্য সোনা, রুপোর পদক অপেক্ষা করছে।’’ বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, প্রশাসন অনুমতি দেবে না জেনেই এ দিনের সভা বিনা অনুমতিতে করা হয়েছে। বাস মালিকরা শাসকদলের ভয়ে বাস দেয়নি। জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্তম সুধীর কুমারের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘সভার অনুমতি ছিল না। তবে রাজনৈতিক মঞ্চের বক্তৃতা নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’ তবে রাজনৈতিক আক্রমণের জবাব দিয়েছেন অভিষেক। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় তিনি বলেন, “আমরা যাঁকে দল থেকে ছুড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি, তাঁকে নিয়ে এখন বিজেপি নাচানাচি করছে। ওই চাটনিবাবু আবার বলছেন এখানে বাঁকুড়ায় নাকি কয়লা, গরুর অবৈধ কারবার চলছে। তিনি নিজেই যত অসামাজিক, অবৈধ কাজে পিএইচডি করে বসে আছেন।” তালড্যাংরার তৃণমূল বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘নব্য বিজেপি। তাই এত মাতামাতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE