ফাইল চিত্র।
ব্লিচিং দিয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন পুরসভা মশা মারতে ব্লিচিং ব্যবহার করেই চলছে।
সম্প্রতি শিলিগুড়ি, কোচবিহার ও মালদহের ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ সহ বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্লিচিং ছড়ানো হয়। রাস্তার ধারে, নর্দমাতে সেই ব্লিচিং দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে শহরের নাগরিকদের মধ্যে।
তারপরেও কেন ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে? ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মশা মারার জন্য আমরা কীটনাশক স্প্রে করছি। মশা তাড়াতে কামানও দাগা হচ্ছে। কিন্তু ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে যাতে মসা বসতে না পারে।’’ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ব্লিচিংয়ে খরচ না করে সে টাকায় বরং কীটনাশক স্প্রে করা হোক। বিরোধী দলনেতা নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারির দাবি, ‘‘লোক দেখানোর জন্য ব্লিচিং ছড়াচ্ছে পুরসভা। তাদের উচিত, আগে এটা জানা যে মশা রুখতে ঠিক কী করা উচিত।’’
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শুকনো ব্লিচিং ছড়ালে মশা বা মশার লার্ভা কোনটাই মরে না। উল্টে মাত্রাতিরিক্ত ব্লিচিংয়ের ব্যবহারে ব্যাঙ, বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ, উপকারি নানা রকমের ব্যাক্টেরিয়া মরে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা পরিবেশপ্রেমীদের। ভবিষ্যতে পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রে তার ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকে।
প্রশ্ন উঠেছে তেলের সঙ্গে ‘ম্যালাথিয়ন’ রাসায়নিক দিয়ে ফগিং করা নিয়েও। উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন চা বাগানের ভিতর ওই কীটনাশকের বহুল ব্যবহার এবং বৃষ্টির জলে ধুয়ে নদীতে মিশে বিভিন্ন নদীয়ালি মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা অতীতেও বার বার সরব হয়েছেন।
ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ি শহরে গত তিন মাসে কয়েক হাজার বস্তা ব্লিচিং, চুন ছড়ানো হয়েছে। নিকাশি নালাগুলিতে ব্লিচিং দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সরকার জানিয়েছেন, ব্লিচিং কখনই মশার লার্ভা বা মশা মারতে পারে না। দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যও একই কথা বলেন। এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ডেঙ্গি প্রতিরোধের বিভিন্ন বৈঠকও ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে যে ব্লিচিংয়ে এ ব্যাপারে কোনও কাজ দেয় না।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘মশার লার্ভার সব চেয়ে বড় শত্রু ব্যাঙ, মাছ বরং ব্লিচিংয়ের প্রভাবে মরে যাচ্ছে। বাস্তুতন্ত্রকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত করছি। ভবিষ্যতে যখন বড় কোনও বিপর্যয় এর জন্য ঘটবে তখন সামলাতে পারা হয়তো মুশকিল হবে।’’ বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে দেখা উচিত বলেই তাঁরা মনে করছেন।
মশা মারতে তেলের সঙ্গে ‘ম্যালাথিয়ন’ নামে যে রাসায়নিক মেশানো হয়, তা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন শিলিগুড়ি কলেজের শিক্ষক অভিজিৎ মজুমদার। তাঁর মতে, এই কীটনাশকের জন্যই নদীতে মাছ মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশপ্রেমীরা কম ক্ষতিকারক ‘সাইপার মেথ্রিন’ নাম অন্য একটি রায়াসনিকের ব্যবহার নিয়েও অনেক ক্ষেত্রে হইচই শুরু করেছেন। শিলিগুড়ি শহরেও ম্যালাথিয়ন মতো রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধের দাবি তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy